জাভেদ হাবিবের প্রশিক্ষণ পাবে বাংলাদেশের হিজড়ারা

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে উত্তরণ ফাউন্ডেশন ও হাবিব ফাউন্ডেশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৯ নভেম্বর। ছবি: সংগৃহীত
হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে উত্তরণ ফাউন্ডেশন ও হাবিব ফাউন্ডেশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৯ নভেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিখ্যাত হেয়ার এক্সপার্ট জাভেদ হাবিবের তত্ত্বাবধানে ‘হেয়ার ফ্যাশন’–এ প্রশিক্ষণ পাবেন বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশর ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ ও ভারতের ‘হাবিব ফাউন্ডেশন’–এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী এম এম মাহবুব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেয়ার এক্সপার্ট ও হাবিব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ হাবিব, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক, পরিচালক ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি বিধান ত্রিপুরা, পরিচালক ও গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক খন্দকার, পরিচালক মো. রমজান আহম্মেদ, আর্টিসান আউট ফিটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আহম্মেদ রাসেল, হাবিব ফাউন্ডেশনের হেড অব ফ্রেন্সাইজি কোহিনূর মণ্ডল, যমুনা ব্যাংকের হেড অব মার্কেটিং নূর নবী খান, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে অনন্যা, শাম্মী, নিশাত, আলেয়া, সজীব, ঝুমা, চৈতী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ এবং ‘হাবিব ফাউন্ডেশন’–এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর ঢাকায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর উত্তরণ ফাউন্ডেশন মনোনীত দুজন হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) সদস্যকে ভারতে নিয়ে জাবেদ হাবিবের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিকমানের ‘হেয়ার ফ্যাশন’ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশে ফিরে এসব প্রশিক্ষিত সদস্যরা বাংলাদেশে বসবাসরত নিজেদের গোষ্ঠীর অন্য সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেবেন। পরে প্রশিক্ষিত এই সদস্যরা উত্তরণ ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিভিন্ন বিউটি পারলার ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে জাবেদ হাবিব পরিচালিত সেলুনগুলো ছাড়াও অন্যান্য পারলার বা সেলুনে হেয়ার এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

হেয়ার এক্সপার্ট জাভেদ হাবিব বলেন, ‘আমি ৮২০টি সেলুন পরিচালনা করি। এখানে যে কেউ কাজ করতে পারেন। জেন্ডার (লিঙ্গ) কোনো বিষয় না। সবার আগে প্রয়োজন দক্ষতা বৃদ্ধি করা। আমি মূলত সেই কাজটি করে যাচ্ছি। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মনোনীত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা একদিন নাম করা হেয়ার এক্সপার্ট হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন, যা অন্য সবার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে।’

কামরুল হাসান শায়ক বলেন, বেদে ও হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ও বর্তমান ডিআইজি (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) হাবিবুর রহমান এই উত্তরণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিমধ্যে এই ফাউন্ডেশনের আওতায় ঢাকার আশুলিয়া ও সাভারে, মানিকগঞ্জ সদরে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে মোট ৪টি ‘উত্তরণ বিউটি পারলার’ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার কামার পাড়ায়, গাইবান্ধার ডেভিড কোম্পানি পাড়ায় এবং রাজবাড়ী সদরে একটি করে মোট ৩টি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে। এসব ডেইরি ফার্মে প্রায় ৫০ জন সদস্য কর্মরত আছেন। পাশাপাশি ঢাকার মগবাজারে ট্রেনিং সেন্টার ও বুটিক হাউস, উত্তরার দিয়াবাড়িতে মিনি গার্মেন্টস, উত্তরা রাজউক মার্কেটে টেইলার্স, তুরাগ থানা এলাকায় টেইলার্স এবং ধামরাই বাজারে একটি বুটিক হাউস স্থাপন করা হয়েছে। এসব পোশাক প্রতিষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি বেদে ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলোতে আরও ৫০ জনের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে কামরুল হাসান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি মধ্যে রয়েছে হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) জনগোষ্ঠীর মৌলিক-মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে তৎপর রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্ট ঘোষণা, হিজড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ, নারী-পুরুষের পাশাপাশি তাঁদেরও সমানভাবে মূল্যায়ন, প্রত্যেক সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বয়স্ক ও অক্ষম সদস্যদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা, জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে তাঁদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, জেলা পর্যায়ে তাঁদের পারিবারিক বিরোধ নিষ্পন্ন করার জন্য বিনা খরচে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা প্রদান, তাঁদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, সরকারি হাসপাতালে অসুস্থ সদস্যদের জন্য সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা প্রদান, হিজড়া জনগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা সদস্যদের জন্য বিশেষ ব্যাংক লোনের সুবিধা, সরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বাংলাদেশে বসবাসরত হিজড়া জনগোষ্ঠীর একটি পরিপূর্ণ ডেটাবেইস তৈরি করে তাঁদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা।