দলের কৌশলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা 'অস্বস্তিতে'

অধিকাংশ আসনে যাঁদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সমপর্যায়ের নেতা। তাই কে দলের মূল প্রার্থী, এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

‘কৌশলগত কারণে’ প্রাথমিকভাবে প্রতিটি আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে দলের এমন ‘কৌশলে’ অস্বস্তিতে আছেন সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী। দলীয় মনোনয়নের চিঠি পাওয়া বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলের নেতা–কর্মীরা বলেন, দলের প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় সাধারণ কর্মী–সমর্থকেরা বিভ্রান্তিতে আছেন। কারণ, মনোনয়নের চিঠি পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই নিজেকে মূল প্রার্থী বলে দাবি করেছেন। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর বেশির ভাগ স্থানে বঞ্চিত প্রার্থী ও তাঁর অনুসারীরা বেঁকে বসতে পারেন।

নেতা–কর্মীরা বলেন, তবে কিছু আসনে একাধিক নেতাকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও প্রার্থী কে হবেন তা নিশ্চিত। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলেন, ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পাশাপাশি আজাদ জহির নামের আরেকজনকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত ঘোষণা না এলেও বোঝা যাচ্ছে মির্জা আব্বাসই এ আসনের প্রার্থী। আবার ঢাকা–৭ আসনে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদকেও মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ধরে নেওয়া যায়, এ আসনে আফরোজা আব্বাসই হবেন মূল প্রার্থী।

দলীয় সূত্র বলছে, এমন দু–একটি আসন ছাড়া বাকি আসনগুলোতে যাঁদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সমপর্যায়ের নেতা। তাই সংশ্লিষ্ট আসনে কে দলের মূল প্রার্থী, এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

ঢাকা-১৭ আসনের বিএনপির সমর্থক মিজানুর রহমান বলেন, ওই আসনে তিনজনকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কার সঙ্গে থাকবেন, এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন নেতা মনে করেন, একাধিক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা ইতিবাচক। তবে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণার পর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, যাঁরা মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেকে মূল প্রার্থী বলে প্রচার করছেন। যখন চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে, তখন অন্তঃকোন্দল দেখা দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরের অন্তত পাঁচটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাই সংশ্লিষ্ট আসনে যোগ্য প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়। তাঁদের মনোনয়ন না দিয়ে অন্যজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে তাঁরা ভাবমূর্তির সংকটে পড়বেন। তাঁদের অনুসারীরাও এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবেন না। এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন, কিছু আসনে এমন প্রার্থী আছেন, যাঁরা এক দশক ধরে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মাঠে সক্রিয় ছিলেন। আবার সেসব আসনে এমন প্রার্থীও আছেন, যাঁরা আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন না। এ ক্ষেত্রে মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে মৌখিকভাবে হয়তো অনেকে মেনে নেবেন। কিন্তু ওই প্রার্থীর জন্য বঞ্চিত প্রার্থী কাজ করবেন না।

ঢাকা-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি নবীউল্লাহ নবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া।

একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে সেলিম ভূঁইয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত না করায় সমর্থকেরা দোটানায় আছেন। তাঁরা কোন দিকে যাবেন, এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। এতে নির্বাচনী কাজে দেরি হচ্ছে। আবার দল যে কৌশলে নিয়েছে, সেটাও ঠিক আছে। কারণ, কোনো প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করলে শূন্যতা পূরণ করা যাবে।

ঢাকা-১৩ আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী ও আবদুস সালাম। এ প্রসঙ্গে আতাউর রহমান ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক প্রার্থী দেওয়ার কারণে তিনি বড় সমস্যা দেখছেন না। তবে কিছু সমস্যা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।