বিএনপি-আ.লীগের পথের কাঁটা স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নওগাঁ-৪ আসন। এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন তিনজন। তাঁরা তিনজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। স্থানীয় নেতাদের ভাষ্যমতে, যাচাইবাছাইয়ের সময় মনোনয়নপত্র বাতিল না হলে তাঁদের মধ্যে সাবেক সাংসদ সামসুল আলম প্রামাণিক শেষ পর্যন্ত দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের আমির খন্দকার আবদুল রাকিব। তাঁর প্রার্থিতা ঠিক থাকলে বিএনপির প্রার্থীর জয়ের পথে তিনিই হবেন কাঁটা। কারণ এখানে জামায়াতের নিজস্ব ভোট আছে।

অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। বিএনপির প্রার্থীদের মতো তাঁর পথের কাঁটা হিসেবে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আবদুল বাকী। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দীর্ঘদিন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিএনপির ও জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্দায় জামায়াতে ইসলামীর শক্তিশালী ভিত রয়েছে। ১৯৯১ সালে এখানে জামায়াতের প্রার্থী নাছির উদ্দীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে এখানে জয় পান বিএনপির প্রার্থী সামসুল আলম প্রামাণিক। ওই সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যবধানে তৃতীয় হলেও জামায়াতের প্রার্থী নাছির উদ্দীন ৪৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আবারও জয়ী হন বিএনপির সামসুল আলম প্রামাণিক। ২০০৮ সালে ঐক্যজোটের প্রার্থী সামসুল আলম প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মান্দায় ৫৬ হাজার ৭৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রশিদ।

জামায়াতের এই প্রার্থীকে দমাতে না পারলে এখানে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে জয় পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী।

এ ব্যাপারে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল রাকিব বলেন, এখানে জামায়াতের কেমন ভোট রয়েছে তা গত নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেয়। বর্তমানে এই উপজেলায় ৬০-৭০ হাজার দলীয় ভোট আছে। দলের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে এখানে তাঁর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কারও সঙ্গে সমঝোতার বিষয় নেই। নির্বাচনে জনপ্রিয়তা প্রমাণের উদ্দেশ্যেই প্রার্থী হয়েছি। সুতরাং শেষ পর্যন্ত আমি প্রার্থী থাকতে চাই।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির দলীয় মনোনয়নের চিঠি নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন সাবেক সাংসদ সামসুল আলম প্রামাণিক, জেলা বিএনপির সহসভাপতি একরামুল বারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল মতিন। তাঁদের মধ্যে সাবেক সাংসদ সামসুল আলম প্রামাণিকের চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সামসুল আলম প্রামাণিক বলেন, জামায়াতের প্রার্থী এখানে বিএনপির জন্য কোনো বাধা হতে পারবে না। বর্তমানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখানে ঐক্যবদ্ধ। ভোটের আগ পর্যন্ত এই ঐক্য ধরে রাখতে পারলে এখানে ধানের শীষের জয় হবে। তা ছাড়া জোটের শরিক হিসেবে জামায়াতের এই প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। দেখা যাক শেষমেশ কী ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ৪৮ বছর ধরে নির্বাচন করে আসছেন। তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁর বিপরীতে আবদুল বাকী তেমন শক্তিশালী প্রার্থী নন। তবে ভোটের মাঠে দলের কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ভোটারের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই তাঁকে বশে আনতে না পারলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর জয়ের পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন আবদুল বাকী।