বিএনপিতে কে আসল, কে নকল

ফজলুল হক আছপিয়া, দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, কলিম উদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী
ফজলুল হক আছপিয়া, দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, কলিম উদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় এখানে কে আসল প্রার্থী আর কে নকল প্রার্থী, তা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মনে প্রশ্ন জাগছে।

শুধু সুনামগঞ্জ-৪ আসন নয়, জেলার পাঁচটি নির্বাচনী আসনের চারটিতেই বিএনপির একাধিক নেতা দলীয় চিঠি পেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনটিতে দুজন করে এবং একটিতে জমা দিয়েছেন তিনজন।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাদীর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নানা অপকৌশল, ইসির বিমাতাসুলভ আচরণ এবং আদালতের খড়্গ—কোনো আসন থেকে আমাদের প্রার্থীরা যাতে বাদ না পড়েন, এ জন্য বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। মাঠে আলোচনা ও জল্পনাকল্পনা যা–ই থাকুক, কে মূল আর কে বিকল্প প্রার্থী, এটা কেন্দ্র ছাড়া কেউ জানে না। যথা সময়েই সেটি পরিষ্কার হবে।’

সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসন। জেলা সদরের এ আসনে বিএনপির দলীয় চিঠি পেয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোহাম্মদ ফজলুল হক আছপিয়া ও দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। আছপিয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সাংসদ ও হুইপ। দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন মরমি কবি হাসন রাজার প্রপৌত্র। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের টানা চারবারের চেয়ারম্যান।

এ দুজনের মধ্যে ‘বিকল্প’ প্রার্থী কে? নেতা-কর্মী আর ভোটারদের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আছপিয়া এবং জাকেরীন দুজনই ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। কেউই নিজেকে বিকল্প প্রার্থী ভাবতে রাজি নন।

এ আসনের ভোটার জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা পড়েছি বিপাকে। কে আসল আর কে বিকল্প, সেটা বুঝব কী করে? দুজনই দলীয় চিঠি পেয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। একজনের সঙ্গে গেলে আরেকজন মন খারাপ করবেন ভেবে শেষ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই যাইনি।’

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ (মিলন) এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। এই দুই নেতার এখানে দলীয়ভাবে যেমন প্রভাব রয়েছে, তেমনি ভোটের মাঠেও রয়েছে শক্ত অবস্থান।

কলিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি নেতা-কর্মীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। তিনবার এখন থেকে সাংসদ হয়েছি। নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ও মাঠের বাস্তবতা বিবেচনায় এখানে আমিই ধানের শীষ পাব এটা নিশ্চিত।’

মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। ছাত্রদলের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, জেল খেটেছি, গুলিবিদ্ধ হয়েছি। নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে কমিটি করেছি। মানুষ পরিবর্তন চায়, নতুনত্ব চায়। এবার এখানে ধানের শীষ নিয়ে আমিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা) বিএনপির চিঠি পেয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনজন। এরাঁ হলেন সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। নজির হোসেন এখান থেকে তিনবার সাংসদ হয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন তিনি।

কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘মনোনয়নের চিঠিতে মূল বা বিকল্প প্রার্থী বলে কোনো কিছু লেখা নেই। তাই কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত যাঁরা চিঠি পেয়েছেন, তাঁরাই দলের প্রার্থী। এখন কাউকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।’

আনিসুল হক বলেন, ‘এখানে দুর্দিনে আমি দলকে সংগঠিত করেছি। দলের জন্য আমার ত্যাগ রয়েছে। যাঁরা মনোনয়ন চাইছেন, তাঁরা এক-এগারোর সময়ে মাঠে ছিলেন না। তখন নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমি মনে করি, সার্বিক দিক বিবেচনায় আমিই ধানের শীষ পাব।’

সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই ও শাল্লা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সাংসদ ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা তাহির রায়হান চৌধুরী (পাভেল)। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, নাছির চৌধুরীই ধানের শীষ পাবেন। তবে তাহির রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দলের প্রার্থী হিসেবেই মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কেন্দ্র থেকে।’

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কোনো নেতাকে চিঠি দেওয়া হয়নি। এ আসনে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তিনি এবারও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এখানে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে সাবেক যুবলীগ নেতা মো. নজরুল ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের হয়ে সাবেক বিএনপি নেতা সৈয়দ আলী আহমদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনজনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চান।

শাহীনুর পাশা চৌধুরী বলেন, ‘এখানে আমি আগেও জোটের প্রার্থী ছিলাম। এবারও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হব, এটা দলীয়ভাবে চূড়ান্ত হয়েছে।’