দলগুলোর কাছে কী চান কোটা আন্দোলনকারীরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের কাছে ‘তারুণ্যের ইশতেহার–ভাবনা’ উত্থাপন করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এই ইশতেহার–ভাবনা উপস্থাপন করেছে।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ইশতেহার–ভাবনা উপস্থাপন করা হয়। এতে বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান, চাকরির নিয়োগব্যবস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলনকারীদের মতামত ও দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। এসব দাবি সারা দেশের তরুণ সমাজের দাবি উল্লেখ করে তাঁরা সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে তা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে গিয়েও নেতাদের কাছে ইশতেহার–ভাবনার কপি দিয়ে আসেন।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন৷ পরে ইশতেহারটি পড়ে শোনান যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান৷ এতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষাজীবন শেষে তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের নিশ্চয়তা দেওয়া, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সরকারি চাকরির শূন্যপদগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তরুণদের কর্মমুখী করার লক্ষ্যে ‘কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন যুগোপযোগী পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

‘বেসরকারি চাকরি আইন’ প্রণয়ন করতে হবে
এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যৌক্তিকতার ভিত্তিতে প্রচলিত কোটাব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সব বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে। প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফল প্রকাশ করার ঘোষণা দিতে হবে৷ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার ১০ দিন এবং লিখিত পরীক্ষার ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার মৌখিক নম্বর কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ করতে হবে৷ সরকারি আইনের আলোকে ‘বেসরকারি চাকরি আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করতে হবে৷

‘প্রশ্নফাঁস বিরোধী সেল’ গঠন
ইশতেহার–ভাবনায় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক, বাস্তবসম্মত ও কর্মমুখী করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে বলছেন কোটা আন্দোলনকারীরা। শিক্ষা খাতে বার্ষিক বাজেটের ন্যূনতম ২০ শতাংশ বরাদ্দ করারও দাবি তাদের। তাঁরা শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রশ্নফাঁস বিরোধী সেল’ গঠন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করার দাবি করছেন এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধের কথা বলেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রতিবছর অবশ্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের নিশ্চয়তা চান কোটা আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম আবাসন সংকট দূর করে আবাসন সমস্যার সমাধান, ছাত্ররাজনীতির নামে আবাসিক হলে সিট–বাণিজ্য ও শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি চান। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ন্যূনতম ১০ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখার দাবি তোলেন। শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে নতুন বেতনকাঠামো তৈরি করার দাবি করেন।

নির্বাচিত ছাত্র-প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘যুব অ্যাসেম্বলি’ আয়োজনের প্রস্তাব
দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র-প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিবছর ‘যুব অ্যাসেম্বলি’ আয়োজনের প্রস্তাবও রেখেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ৷ এ ছাড়া সভা-সমাবেশ, বাক্স্বাধীনতা ও সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা, গণমাধ্যম ও নাগরিকের স্বাধীনতাকে হরণ করে এমন সব আইন বাতিল, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নীতি গ্রহণ, সুলভ মূল্যে শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলেতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা, সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করা, সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করা, পরিবেশবিধ্বংসী যেকোনো প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়া এবং পূর্বে অনুমোদিত এ ধরনের প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব ও দাবি উত্থাপন করেছে সংগঠনটি৷

মিলনায়তন বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনটি ডাকা হয়েছিল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁরা ভবনের সামনে এর আয়োজন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মিলনায়তন বরাদ্দ না পাওয়ার কথা জানান সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। তিনি বলেন, ‘অনুষদ থেকে মিলনায়তন বরাদ্দ পাওয়ার পর হঠাৎ করেই জানানো হয়, আমাদের এখানে সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না৷ কোনো যৌক্তিক কারণও আমাদের জানানো হয়নি। আমরা প্রশাসনের এ ধরনের নির্লজ্জ আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ঘ ইউনিটের পুনঃপরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তি-প্রক্রিয়া চলছে৷ প্রথমে অনুষদের ডিনের অনুমোদন ছাড়াই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল৷ পরে বিষয়টি অবহিত হয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হয়৷