জাপার সাংসদ আলতাফের হলফনামায় অসংগতি

>

২০১৪ সালের হলফনামায় তিনি দুটি বাড়ি ও ২০ বিঘা আবাদি জমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবার একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।

আলতাফ আলী
আলতাফ আলী

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার বর্তমান সাংসদ মুহাম্মদ আলতাফ আলী চড়েন দামি গাড়িতে। বগুড়া শহরের শিববাটি শাহী মসজিদ লেন এলাকায় ৮ শতক জায়গার ওপর তাঁর রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। তা ছাড়া গাবতলী উপজেলার টিওরপাড়া গ্রামে রয়েছে ৬ শতক জায়গার ওপর টিনশেডের একটি আধা পাকা বাড়ি। রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ও নিজের কেনা প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি। ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি দুটি বাড়ি ও ২০ বিঘা আবাদি জমির থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবার নিজের স্থাবর সম্পদ বলতে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।

বাড়িটি কাঁচা না পাকা কিংবা মূল্য কত, তা উল্লেখ করেননি। নিজের নগদ কিংবা ব্যাংকে একটি টাকাও নেই। তবে নিজের ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার, ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকসামগ্রী, ৩৫ হাজার টাকার আসবাব আছে। অন্যান্য খাতে তাঁর ৪৭ লাখ ২০ ৩৭৯ টাকা মূল্যের সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ নেই।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে মুহাম্মদ আলতাফ আলীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা, ৪৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকসামগ্রী, ৫০ হাজার টাকার আসবাব এবং স্ত্রীর স্বর্ণালংকার ছিল ৫ ভরি। মূল্য দেখানো হয় ১০ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ৩০ হাজার টাকার কম্পিউটারের কথাও বলা হয়েছে। ২০১৪ সালেও অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে একই বিষয় উল্লেখ করেন আলতাফ আলী।

২০০৮ সালের হলফনামায় আলতাফ আলী নিজের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১০ বিঘা কৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেন। দাম ধরা হয় ২০ হাজার টাকা। অকৃষিজমি ছিল ২ বিঘা। দাম উল্লেখ করা হয় ৩ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর ছিল ৫ বিঘা জমি। দাম ধরা হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। তাঁদের যৌথ মালিকানায় একটি টিনশেড ও আবাসিক দালান রয়েছে।

২০১৪ সালের হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ। হলফনামায় ২০ বিঘা জমির দাম উল্লেখ করা হয় ২০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে দুই বিঘা অকৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও ২০১৪ সালে কোনো অকৃষিজমি দেখানো হয়নি। তবে স্ত্রীর মালিকানায় ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৫ বিঘা জমির কথা এবারও উল্লেখ আছে। তাঁদের যৌথ মালিকানায় একটি টিনশেড ও একটি আবাসিক দালান রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এবারের হলফনামায় কোনো কৃষি কিংবা অকৃষিজমি নেই বলে উল্লেখ করেছেন আলতাফ আলী। নিজ নামে একটি বাড়ি থাকলেও সেটি কোন ধরনের বাড়ি, তা তিনি উল্লেখ করেননি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের হলফনামায় আলতাফ আলী হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এবার সেটি ব্যাংকঋণ বলে উল্লেখ করেছেন।

সবগুলো হলফনামায় আলতাফ আলী নিজের পেশা বগুড়া অঞ্চলের সোনালী ও জনতা ব্যাংকের আইনজীবী এবং লিগ্যাল এইড অ্যাডভাইজার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবারের হলফনামায় তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ৫০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয় তাঁর।

হলফনামার সঙ্গে নির্বাচনী ব্যয় এবং ব্যয়ের অর্থ কোথা থেকে জোগানো হবে, তা নির্বাচনী ফরমের ২০ নম্বর পাতায় উল্লেখ করার কথা। কিন্তু আলতাফ আলী নির্বাচনী ব্যয় এবং ব্যয়ের বিবরণী ফরম ফাঁকা রেখেই হলফনামা জমা দিয়েছেন।