সম্পদে স্বামীকে ছাড়িয়ে মাছুদা

মাছুদা মোমিন, মোমিন তালুকদার
মাছুদা মোমিন, মোমিন তালুকদার
>
  • জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মোমিন তালুকদার মানবতাবিরোধী মামলার পলাতক আসামি।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকেও মোমিন পরিবারকে পরিহারের দাবি জানানো হচ্ছে।
  • বিএনপির মূল প্রার্থী মোমিন তালুকদার। মানবতাবিরোধী মামলায় পলাতক।
  • এ কারণে স্ত্রী মাছুদাকে এখানে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখেছে বিএনপি।
  • ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ‘রাজাকার’ পরিবারের কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী মাছুদা মোমিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তিনি পেশায় গৃহিণী। বছরে তাঁর আয় ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। স্বামীর চেয়ে তাঁর স্থাবর সম্পদ বেশি।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় মাছুদা মোমিন এ তথ্য দিয়েছেন। এই আসনে বিএনপির মূল প্রার্থী তাঁর স্বামী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দলের সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা। অভিযোগ রয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি আদমদীঘি থানা ‘রাজাকার কমান্ডার’ ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে মোমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ কারণে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মাছুদাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। স্বামী-স্ত্রী দুজনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

হলফনামায় মাছুদা মোমিন উল্লেখ করেন, তাঁর অস্থাবর সম্পদ বলতে রয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ১৬৩ টাকা। স্বর্ণালংকার আছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের। ৪০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব রয়েছে। তা ছাড়া তাঁর স্বামী আবদুল মোমিনের ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার রয়েছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৮০ টাকার। আসবাব রয়েছে ৫০ হাজার টাকার।

স্বামীর চেয়ে স্ত্রী মাছুদা মোমিনের স্থাবর সম্পদ বেশি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, মাছুদার ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা মূল্যের ৬৬ শতক কৃষিজমি রয়েছে। ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতক অকৃষিজমি রয়েছে। ২ হাজার ৬৩ স্কয়ার ফুটের একটি বাড়ি রয়েছে। তবে বাড়িটি কোথায় অবস্থিত এবং এর মূল্য কত, তা উল্লেখ নেই। হলফনামায় আরও উল্লেখ করা হয়, মাছুদার স্বামীর ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২০০ শতক কৃষিজমি আছে। ২ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের ৫ শতক ৩ ছটাক অকৃষিজমি রয়েছে।

তবে ২০০৮ সালে আবদুল মোমিন তালুকদার নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর নিজের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৯ টাকার। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেন ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকার। মাছুদার স্থাবর ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২ বিঘা ১৫ শতক জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

হলফনামায় মাছুদা নির্বাচনী ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য ফরমে উল্লেখ করেছেন, তাঁর চাকরিজীবী তিন মেয়ে নির্বাচনের খরচ বহন করবেন। তাঁর স্বামী আবদুল মোমিন তালুকদার ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তিনি পলাতক রয়েছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগ মহাজোটের প্রার্থী জাপার (এরশাদ) সাংসদ নূরুল ইসলাম তালুকদার। অনেকে মনে করেন, এই আসনে বিএনপি জিম্মি একটি ‘রাজাকার’ পরিবারের কাছে। আর আওয়ামী লীগ বন্দী সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির হাতে।