নির্বাচনে থাকা নিয়ে সংশয় বাম জোটের

সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কমিশনের ‘উপর্যুপরি ব্যর্থতায়’ শেষ পর্যন্ত বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে নিজেরাই সংশয় প্রকাশ করেছে। নেতারা বলছেন, আদৌ নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েই সারা দেশের মানুষের মনে এখনো শঙ্কা রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতি’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এই জোটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, মানুষের মনে এখনো শঙ্কা, আদৌ নির্বাচন হবে কি না। যদি হয়, তবে তাঁরা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না। ভোটের ফলাফল ঠিকভাবে প্রকাশিত হবে কি না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতই উত্তপ্ত যে ক্ষমতাসীনেরা ক্ষমতা ছাড়লে মৃত্যুর ঝুঁকি মনে করছে, ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিরোধী বুর্জোয়া দল মনে করে, ক্ষমতায় যেতে না পারলে তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে জনমনে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকাটাই যৌক্তিক।

এ আশঙ্কার কারণ হিসেবে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতিমধ্যে নরসিংদী, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটছে। নির্বাচন কমিশন আগাগোড়া পক্ষপাতমূলক আচরণ করে আসছে। একদিকে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা স্বপদে বহাল থেকে সরকারি সবকিছু ব্যবহার করে পূর্বের মেজাজেই ভোট করছেন। পক্ষান্তরে বিরোধীরা সব ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে জোটের নেতা-কর্মীদের পুলিশ হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ ও কর্মকাণ্ড জনগণের মতো আমাদেরও ক্রমাগত শঙ্কিত করে তুলছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কমিশনের উপর্যুপরি ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে থাকতে পারব কি না, তা ভবিষ্যতে ভাবতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে জোটের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনে যেতে চাই বলেই মনোনয়ন দিয়েছি। আজ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সব ধরনের আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের তৎপরতা যদি এভাবেই চলে, তখন শেষ পর্যন্ত থাকতে পারি কি না, সেটা ওই সময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, এটা শুধু বামপন্থীদের কথা নয়, সারা দেশের মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে যে তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কি না। এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ করবে, যার লক্ষ্মণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।