ভোট কারচুপি করে জেতার অভিপ্রায় সরকারের নেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে তিন শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে তিন শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি

সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোনো অভিপ্রায় তাঁর সরকারের নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। আর কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে ৩০৭ জন জেষ্ঠ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। এসব কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিজয়ের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ খুশি হয়ে আমাদের ভোট দিলেই আমরা ক্ষমতায় থাকব, না হলে নয়।’ ২০০১ সালে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেই নির্বাচনে আমরা ভোটের সংখ্যায় হারিনি। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা বেশি ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কম আসন দেওয়া হয়েছে।’


এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফলসংক্রান্ত একটি ডকুমেন্ট পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোন কোন আসন দেওয়া হবে আর কোন কোন আসন দেওয়া হবে না, তা লাল, হলুদ, সবুজ ও নীল কালিতে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, সে বছর নির্বাচন কীভাবে মঞ্চায়িত হয়েছে।’

সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, ড. খন্দকার শওকত হোসেন, এস এম আলী কবির ও কামরুন্নেসা খানম এবং সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা খন্দকার, কৃষিবিদ ওয়াসিউজ্জমান আখন্দ, ইঞ্জিনিয়ার কবির আহমেদ ভূঁইয়া, অধ্যাপক দিলারা হাফিজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, রাষ্ট্রদূত আবদুল হান্নান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক নোমানুর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনসার আলী খান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দেশের আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে তারা আবারও দেশকে ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমরা খুনি ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও আগুন–সন্ত্রাসীদের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় এলে আবারও দেশকে ধ্বংস করবে। কিন্তু আমরা ধ্বংসের দিকে যেতে চাই না। আমরা চাই অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করা হবে না। ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এসব কাজ শেষ করবে না। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের অগ্রগতি এবং জনগণ ভালো থাকুক তা চায় না, কেন তারা তা করবে? ‘কিন্তু আমরা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আর এ জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যাবশ্যক।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০৭১ সালে আমাদের শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা করেছি এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণ করেছি। তত দিন আমরা বেঁচে না থাকতে পারি, কিন্তু আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা রেখে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সবাইকে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাবেক সরকারি কর্মচারীদের তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধারার আহ্বান জানান।


শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের জন্য কেবল কাজ করলেই হবে না; জনগণকে এই কাজের কথাগুলো বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা এ সময় জনগণের ওপর বিএনপি-জামাতের অত্যাচার–নির্যাতন, বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার–নির্যাতনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।


শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় সারা দেশে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতা শিকার হয়েছিলেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় বছরের শিশুও তাদের পাশবিকতা থেকে রেহাই পায়নি। সে সময় কয়েক শ সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল বিএনপি-জামায়াত। দেশের সেই অন্ধকার দিনগুলো জনগণ এখনো ভুলে যায়নি।


সে সময়কার সরকারি চাকুরেদের দুর্দশাকে হৃদয়বিদারক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো প্রতিহিংসামূলক বা বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেনি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, আমি মনে করি, সরকারি চাকুরেরা সরকারি কর্মকর্তা এবং তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কে কতখানি দায়িত্ব নিয়ে দক্ষতা এবং আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলেন, সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয়।’