নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াত চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সোহেল রানা, রবিউল আউয়াল, মাহমুদুল, আনসারুল ইসলাম, দেবাশীষ, রাজিউর রহমান ও রেজাউল করিম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, মিরপুর ও কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তাঁদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র প্রেরণের আটটি ডিভাইস, ২৯টি ব্যাটারি, তিনটি পেনড্রাইভ, নয়টি ব্লুটুথ ডিভাইস, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের নয়টি সিমকার্ড এবং আটটি মোবাইল ফোন সেট জব্দ করা হয়।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন। তাঁদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ চক্রের কয়েকজন সদস্য ডিভাইসসহ পরীক্ষার্থী হিসেবে এসব পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা কেন্দ্রের বাইরে ওই চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। বাইরে থাকা সদস্যরা দ্রুত প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করতেন। এভাবে চক্রটি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিত। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এর আগে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার এক মুঠোফোন বার্তায় জানানো হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে গতকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধানে জড়িত ছিলেন।

সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনর উপকমিশনার ( ডিসি) মীর মোদাসসের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পরীক্ষার হলের বাইরে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের সমাধান করে দিতেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ব্যক্তির কার্যক্রম আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগই নেই। প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ বিতরণ ও পরীক্ষা গ্রহণ পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে যাঁরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা মোবাইল সেট জমা দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কাজ করেছেন। তারপর ছাপানো কপি কেন্দ্র অনুযায়ী আলাদা প্যাকেট করে সিলগালা করে কঠোর নিরাপত্তায় কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়। হলে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগে প্যাকেটগুলো খোলা হয়। ৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়। যাঁরা প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাঁদের মোবাইল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে নিয়ে বের হন।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গতকাল রাজধানী ঢাকার ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৯টি এসআই পদের জন্য ৭৮ হাজার ৮১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। গতকাল বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই পরীক্ষা নেওয়া হয়।