স্বামীর আয় বাড়লেও নিঃস্ব হয়েছেন স্ত্রী

রমেশ চন্দ্র সেন
রমেশ চন্দ্র সেন

ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের স্ত্রী অঞ্জলী রানী সেনের আয়, গয়না, স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পদ নেই। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে অঞ্জলী রানী সেনের ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার আয় ও ব্যাংকে ৬ লাখ টাকা জমা ছিল। বর্তমানে তাঁর কিছুই নেই।

কিন্তু গত পাঁচ বছরে সাংসদের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে চার হাজার গুণ, আয় বেড়েছে দেড় গুণের বেশি, তিন গুণ বেড়েছে অস্থাবর সম্পদ, স্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৮ গুণের বেশি।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য মিলেছে। গত ২৮ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া দলের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে আয়বিবরণী ও সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষি ও ব্যবসা।

হলফনামায় দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের হাতে নগদ ছিল শুধু ৩৫৯ টাকা। এখন তাঁর কাছে আছে নগদ ১৬ লাখ ১৭ হাজার ১১৩ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে সাংসদের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ সাড়ে চার হাজার গুণ বেড়েছে।

গত পাঁচ বছরে রমেশ সেন আয় করেছেন ৫৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৬১ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি থেকে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮২ টাকা, ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, ১৮ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা ব্যবসা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৮৭ টাকা ও ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৪ টাকা সাংসদের সম্মানী ভাতা থেকে আয় করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

২০১৪ সালে রমেশ চন্দ্র সেন কৃষি থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার, ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ টাকা ও সাংসদের সম্মানী ভাতা থেকে ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকাসহ ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৯২ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। সে তুলনায় তাঁর আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৬১ গুণ। ২০০৮ সালে তাঁর আয় উল্লেখ করেছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮ টাকা। সে হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে তাঁর আয় বেড়েছে ২৭ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে রমেশ সেন তাঁর স্ত্রীর অঞ্জলী রানী সেনকে পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত দেখিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর ব্যবসা দেখানো হয়নি।

২০০৮ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে রমেশের নিজ নামে জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৭৩ হাজার ৭০৪ টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩ পয়সা। আর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৭৭১ টাকা। আর ২০০৮ সালে তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ছয় লাখ টাকা জমা দেখালেও বর্তমানে জমা কোনো টাকা দেখানো হয়নি।

২০১৪ সালে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার খাতে তাঁর নামে কোনো জমা না থাকলেও এবার রমেশের নামে জমা দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

২০০৮ সালে তিনটি গাড়ির মূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা। ২০১৪ সালে ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫৫ টাকা মূল্যের দুটি জিপ, একটি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাক্টর দেখানো হয়। আর এ বছর তিনটি জিপ ও একটি মোটরসাইকেলের মূল্য ১ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৪ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।