ইভিএম প্রদর্শনীতে মানুষের আগ্রহ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের উল্টো দিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের পাশে মানুষের জটলা। সবাই আগ্রহ নিয়ে একটি যন্ত্র দেখছেন। আর তা দেখাচ্ছেন দুই ব্যক্তি। কাছে গিয়ে দেখা গেল যন্ত্রটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে গত শনিবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ইভিএম প্রদর্শনী।

ইভিএম দেখাচ্ছিলেন নির্বাচন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর রাজু আহমেদ। তিনি জানালেন, কয়েক দিন ধরে এই স্থানে ইভিএমের প্রদর্শনী চলছে। কীভাবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট দেওয়া যাবে, তার ব্যবহার দেখাচ্ছেন তিনি। গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার মানুষ এখানে এই যন্ত্রের ব্যবহার দেখেছেন।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের উল্টো দিকে প্রদর্শনীতে ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের উল্টো দিকে প্রদর্শনীতে ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজু আহমেদ বললেন, ভোটার এসে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাবেন। সেটি দেখার পর পরিচয়পত্রের নম্বর ধরে ভোটারের তথ্য বের করা হবে। তথ্য মিলে গেলে ভোটারের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। ছাপ নেওয়া হয়ে গেলে ভোটার গোপন কক্ষে গিয়ে সেখানে রাখা ইভিএমের ডিসপ্লে পর্দা দেখতে পাবেন। সেখানে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর মার্কা থেকে নিজের পছন্দমতো সিল বাছাই করে তাতে ভোট দিতে পারবেন। যদি ভুল করে অন্য প্রার্থীর সিলে চাপ পড়ে যায়, তাহলে ভোটার তা সংশোধন করতে পারবেন। এভাবে ভোট দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হলে স্পিকারে বেজে উঠবে ‘আপনার ভোট সম্পন্ন হয়েছে’।

আরেক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর অবিনাশ চন্দ্র রায়ও কাজ করছেন এই কেন্দ্রে। তিনি বলেন, এখানে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার আরেক জনের ভোটও দেওয়ার সুযোগ নেই। কত জনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, তা পর্দায় গণনা হতে থাকবে। সেটি দেখা যাবে। এতে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই, তাই হ্যাক করাও যাবে না। পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে মেশিন চালু করা সম্ভব নয়। ইভিএম ছিনতাই করেও ভোট পরিবর্তন বা কারচুপি করা যাবে না। ভোট শেষে ভোটের ফলাফল প্রিন্ট করা যাবে, ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট গণনা শেষ করা যাবে। তিনি আরও জানালেন, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হচ্ছে। যেখানে ইভিএম ব্যবহারের বিভিন্ন নিয়ম লেখা আছে।

ইভিএম প্রদর্শনী কেন্দ্রে এসেছিলেন মা রুনা আক্তার ও মেয়ে আঁখি আলম। মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ সড়কের বাসিন্দা তাঁরা। আঁখি আলম বলেন, ‘বাবা বলেছেন এবারে ইভিএমে ভোট দিতে হবে। তাই যন্ত্রটি দেখতে বলেছিলেন। সে জন্য মাকে নিয়ে এসে যন্ত্রটির ব্যবহার সম্পর্কে শিখে গেলাম। এখন সহজেই এর মাধ্যমে ভোট দিতে পারব।’

কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয়, তা শেখানো হচ্ছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয়, তা শেখানো হচ্ছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

জাকির হোসেন রোডের বাসিন্দা মোবারক হোসেন। টাউন হলের পাশে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন তিনি। দেখতে এসেছিলেন ইভিএমের ব্যবহার। তিনি ইভিএমের ব্যবহার শেখার পর বেশ খুশি। বললেন, ‘দাদার আমলে শুনছি তাঁর ভোট আরেক জনে দিয়া দিছে। হে আর ভোট দিবার পারে নাই। গত নির্বাচনে আব্বা ভোট দিবার গেছে, তখন শোনে ওর ভোটও মানষে দিয়া দিছে। পরে তারে পুলিশ ধাক্কা দিছে। মনটা খারাপ হইয়া গেছিল। এই মেশিনে ভোট আর জাল করতে পারব না। আমি এবার প্রথম ভোটার হইছি। আমার এই মেশিন ভালো লাগছে।’

ইভিএমের প্রদর্শনীতে এসে নুরজাহান রোডের বাসিন্দা অনাদি তোষ হাওলাদার বললেন, ‘এই যন্ত্র নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শুনেছি। কিন্তু সব দেখে মনে হচ্ছে ভালো ইতিবাচক একটি যন্ত্র। এটির ব্যবহার বাড়ালে তো কোনো ক্ষতি দেখি না। তবে যেভাবে প্রদর্শনীটি করা হচ্ছে, তা আরও কিছুদিন আগে করলে মানুষের আরও উপকার হতো।’

নির্বাচন কমিশন বলছে, ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
নির্বাচন কমিশন বলছে, ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটির পাশে নুরজাহান মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে বসেছে আরও একটি ইভিএম প্রদর্শনী কেন্দ্র। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে কৌতূহলী মানুষ ভিড় করছে। শেখেরটেকের বাসিন্দা সেলিম মিয়া বললেন, সবার জন্য ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগে এ ধরনের প্রদর্শনী বেশ ভালো উদ্যোগ। এটি আরও প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলে মানুষ এটির ব্যবহার সম্পর্কে আরও জানবে।
এখানকার অপারেটররা জানালেন, প্রথমের দিকে মানুষ কম এলেও এখন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে। মানুষ ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করছে। উত্তর পাচ্ছে। ব্যবহার শিখছে। বেশির ভাগ মানুষই এটিকে ইতিবাচক বলছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এটির প্রদর্শনী হচ্ছে। রাজধানীতে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এই দুই আসনের বিভিন্ন এলাকায় একেক দিন একেক জায়গায় এই প্রদর্শনী চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যাতে মানুষ সহজে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে। আর ১৭ ডিসেম্বর থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ‘মক’ ভোট নেওয়া হবে।