বাগ্যুদ্ধে মোমেন-মুক্তাদীর

>

নগরের আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন।   প্রথম আলো
নগরের আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন। প্রথম আলো

মঙ্গলবার মুক্তাদীর বলেন, দৃশ্যমান কিছু কাজ ছাড়া সিলেটে উন্নয়ন হয়নি। গতকাল মোমেন বলেন, ওই বক্তব্য ভুল।

সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন ও বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীরের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সিলেটের উন্নয়ন ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এই কথার লড়াই।  

গত মঙ্গলবার গণসংযোগকালে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর বলেছিলেন, ‘দৃশ্যমান কিছু কাজ ছাড়া গত ১০ বছরে সিলেটে কোনো উন্নয়ন হয়নি।’ তাঁর এ বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোমেন মন্তব্য করেছেন। গতকাল বুধবার গণসংযোগকালে মোমেন বলেন, বিএনপির প্রার্থীর উন্নয়ন সম্পর্কিত ওই বক্তব্য ভুল।

দুপুরে আম্বরখানা এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয়ের সামনে মতবিনিময় সভা করেন মোমেন। এ সময় সরকারি দপ্তরে যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ে। সভায় মোমেন বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতেও আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, এটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। পরে ফলাফল ঘোষণার পর জয়ের খবর পেয়ে বলেছেন, নির্বাচন ঠিক আছে। এটা তাদের অভ্যাস। পুলিশ কোনো বিএনপি কর্মীকে ধরছে না। পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরছে। রাজনৈতিক কারণে কাউকে ধরছে না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘পুলিশ ইসির কথা মানছে না, বিএনপির এ অভিযোগ ঠিক নয়। অহেতুক অপপ্রচার করছেন। তাদের মানসিকতাই এ রকম।’

গতকাল আদালতপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. লালা, আইনজীবী রুহুল আনাম চৌধুরী, হোসেন আহমদ, বিপ্লব কান্তি দে, বেলাল আহমদ, রণজিত সরকার, ফখরুল ইসলাম, মাসুক আহমদ, আবদুল হাই, আনোয়ার হোসেন, নাসির হোসেন, নূরে আলম সিরাজী, মামুনুর রশীদ, মো. শাহজাহান, জয়নাল আহমদ, জাকিয়া জালাল, জ্যোতির্ময় পুরকায়স্থ প্রমুখ।    

দুপুরে নগরের আম্বরখানা এলাকায় জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা হয়। শ্রমিক লীগ নেতা মো. শুকুর আহমদের সভাপতিত্বে ও আবদুল মোস্তাকিমের সঞ্চালনে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রমবান্ধব সরকার। শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রতিনিয়ত তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাই বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জুবের খান, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আরমান আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাফর আহমেদ চৌধুরী, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রশিদ চৌধুরী, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান প্রমুখ।

এদিকে গতকাল সকালে সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার, তেমুখী এবং নগরের কাজিরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিএনপি হলো গণমানুষের দল। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হলো ধানের শীষ। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে ও দেশনায়ক তারেক রহমানকে নির্বাসনে রেখে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই আমাদের বিজয়ের হাতিয়ার।’

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে মুক্তাদীর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে দেশপ্রেমিক জনতাকে এগিয়ে আসতে হবে।

টুকেরবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও মুক্তাদীরের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী, সহসভাপতি এ কে এম তারেক কালাম, উপদেষ্টা শহীদ আহমদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাঈদ আহমদ। তেমুখী পয়েন্টে জেলা অটো ট্রাক পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের জালালাবাদ থানা উপকমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সংগঠনের সহসভাপতি সায়েস্তা মিয়া, শ্রমিকনেতা আলমগীর হোসেন, আবুল কয়েস, জালাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদের প্রচারণা: বেলা ১১টায় নগরের কালীঘাট ও মহাজনপট্টি এলাকায় গণসংযোগ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রেদওয়ানুল হক চৌধুরী (হাতপাখা)। এ সময় তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ইসহাক আহমদ, ইসলামী যুব আন্দোলন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল নয়টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার পিরেরচক এলাকায় গণসংযোগ করেন বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রার্থী উজ্জল রায় (কোদাল)। এ সময় তাঁর সঙ্গে শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনর সভাপতি সুশান্ত সিনহা, ছাত্রফ্রন্ট সিলেট নগরের সহসভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা চারটায় তিনি নগরের বন্দরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী গতকাল ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার, পিটাইটিকর, মাইজগাঁও, বিয়ালীবাজার, ঘিলাছড়া, ঘাটেরবাজার, আশিঘরবাজার, নয়াবাজারে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী, সহসভাপতি মীর সাখাওয়াত হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুহিব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট-৩ আসনের খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. দিলওয়ার হোসাইন গতকাল ফেঞ্চুগঞ্জ, ফেরিঘাট, চানপুর, দনারাম বাজার, ডাইকর বাজার, মাইজগাঁও বাজারে গণসংযোগ করেন। সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেনের সমর্থনে গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা বিএনপি বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওসমান গনি।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরীও গণসংযোগ করেছেন।