কর্মসংস্থান চান তরুণেরা

হেমন্তের সকালের মিষ্টি রোদ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা, শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দিচ্ছিলেন তরুণেরা। গল্পে গল্পে তাঁরা জানালেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সাংসদদের কাছে তাঁরা তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা চান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে তাঁরা। তাঁরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপও নেওয়ার পক্ষে।
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯টি বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা ভবিষ্যৎ সাংসদের কাছে দাবিদাওয়ার কথা জানান। এসব শিক্ষার্থী এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
বিজ্ঞান ভবনের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ৪৯ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেল শ্রেণিকক্ষে। তাঁরা প্রায় অভিন্ন সুরে জানালেন, শিল্পকারখানায় ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের নিয়োগ দিতে হবে। বিষয়ভিত্তিক কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এসব কাজে সাংসদের সহায়তা চান তাঁরা।
এই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘রসায়নে পড়ছি। কাজের ক্ষেত্র চাই। বিষয়ভিত্তিক চাকরি চাই। একাডেমিক জ্ঞান কর্মজীবনে কাজে লাগাতে চাই।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের মারজিয়া মৌসুমী বলেন, তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের আরও অগ্রাধিকার চান। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সাংসদদের পদক্ষেপ চান তিনি।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের সাবিহা রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা শহর থেকে ঝাঁকুনি খেয়ে খেয়ে ক্যাম্পাসে আসি। রাস্তাঘাট বেহাল। দ্রুত এসব রাস্তাঘাটের উন্নয়ন চাই।’
গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জালাল বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। এতে বরাদ্দ কম থাকে। বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জ্ঞানচর্চার নান্দনিক পরিবেশ চাই।’
সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ব্যাডমিন্টন খেলার স্থানে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন লোকপ্রশাসন চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, যাঁরাই ক্ষমতায় আসুক, চলমান উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে।
ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের কান্তা দাস বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হোক। কর্মক্ষেত্রে তরুণদের সুবিধা বৃদ্ধিতে সহায়তা চাই।’
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা তিনজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোট এলে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে থাকেন। এবার যেন সেটা না হয়।
আইন তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাবরি সাবেরীন বলেন, ‘রাজশাহী নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে আমার বাড়ি। আমি শহরের উন্নয়ন চাই।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়েন মো. খোরশেদ আলম। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড়ধূশিয়া গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমপি মহোদয় নির্বাচন এলে বলেন, গ্যাস দেবেন। কিন্তু এখনো গ্যাস পাইনি। গ্রামের বাড়িতে গ্যাস চাই। এবার প্রতিশ্রুতির পূরণ চাই।’
হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জান্নাতুল বাকী বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন চাই। এলাকার উন্নয়ন চাই।’
গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারের জাহিদুল ইসলাম বলেন, তারুণ্যবান্ধব কর্মসংস্থান চাই।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘তরুণেরা কিছু একটা করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ওরা অনেক বড় স্বপ্ন দেখে। কর্মসংস্থান হলে ওরাই দেশটাকে ভালোবেসে সামনে নেবে।