সহিংস হয়ে উঠছে খুলনা

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর সহিংস হয়ে উঠছে খুলনার নির্বাচনী পরিবেশ। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের মারধর, তাঁদের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা, মাইক ও পোস্টার কেড়ে নেওয়া, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসব ব্যাপারে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী প্রার্থীদের ও তাঁদের কর্মীদের অভিযোগ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের সময় হামলার শিকার হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক। তিনি দলের খুলনা মহানগর সভাপতি। ওই হামলায় তিনিসহ কমপক্ষে ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে মুজ্জাম্মিল হকসহ চারজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক দিন সেখানে চিকিৎসা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে যান। অন্য তিনজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন হলেন প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হকের ছেলে যুব আন্দোলনের খুলনা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর হক, ইসলামী আন্দোলনের নেতা হাসিবুর রহমান ও রাকিবুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ মুজ্জাম্মিল হক দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্লাটিনাম জুট মিলের আবাসিক কলোনি এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় প্রথমে তিনজন যুবক এসে পেছনে থাকা নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। তখন তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে যুবকেরা গালাগাল করে বলেন, তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা। কথা বললে জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলা হবে। এর কিছুক্ষণ পরই ২০ থেকে ২৫ জন লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে সেখানে থাকা সবাইকে ঘিরে ফেলেন। তাঁদের অতর্কিত আক্রমণে প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে একই আসনের খালিশপুর জংশন রোড এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হন বিএনপির কর্মীরা। এতে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা লিটন হোসেন ও রুহুল আমিন হাওলাদার গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তাঁরা চিকিৎসাধীন।
খুলনা-৪ আসনেও (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আসনের বিএনপির প্রার্থী আজিজুল বারী হেলালের দাবি, নির্বাচনী প্রচারকাজে সক্রিয় থাকায় বুধবার রূপসার নন্দনপুর গ্রামের মো. নাসিরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া মঙ্গলবার স্বেচ্ছাসেবক দলের আইচগাতী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাঁরা দুজনই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান হেলাল।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে খুলনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়েছিল। যেহেতু সব দল নির্বাচনে এসেছে, তাই আশাটা আরও বেশি। সবারই আকাঙ্ক্ষা, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হোক।
কুদরত-ই-খুদা বলেন, প্রচার শুরু হওয়ার পর যে সহিষ্ণুতা তৈরি হচ্ছে, তা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। মানুষ এখন সন্দিহান, তাঁরা আদৌ ভোট দিতে পারবে কি না। এ মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা না করে আর নির্বাচন কমিশন যদি আন্তরিকভাবে এসব সমস্যার মোকাবিলা না করে, তাহলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হবে। এবার সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সামনের দিনগুলোতে সবার জন্য আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন তিনি।