দেশে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় এক কোটি

১৯৭৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত দশটি সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকার পাশাপাশি আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো। তাতে নির্বাচনে ভোটের ধারা, সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ও প্রকৃতি এবং নারী ভোটারদের গত ৪৫ বছরের চিত্র উঠে এসেছে। আজ থাকছে ভোটে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা 

সংখ্যালঘু জনসংখ্যার হার

হিসাব শতাংশে

১৯৬১         ১৯.৬

১৯৭৪         ১৪.৬

১৯৮১         ১৩.৩

১৯৯১         ১১.৭

২০০১         ১০.৪

২০১১         ৯.৬

সূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—পার্বত্য এই তিন জেলায় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সেখানকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। সে হিসাবে অনুমান করা হয়, এই তিনটি আসনে সংখ্যালঘু ভোটারও মোট ভোটারের অর্ধেক। দেশের বাকি ২৯৩টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটারদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আদমশুমারির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোটারদের অনুমিত সংখ্যা এক কোটির কিছু কম।

ভোটার তালিকায় সংখ্যালঘুদের পৃথকভাবে দেখানো হয় না। তবে নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়। কারণ অনেক আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররা জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখেন বলে ধারণা আছে।

অতীতে বিভিন্ন সময় ভোটার তালিকা থেকে সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। নির্বাচনের দিন তাঁরা যেন ভোটকেন্দ্রে না যান, সে জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়। নির্বাচনের পর অনেক আসনে সহিংসতার মুখে পড়েন সংখ্যালঘু ভোটার ও তাঁদের পরিবার। ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দেশের বেশ কিছু এলাকায় বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছিল, আগুন দেওয়া হয়েছিল। ধর্ষণেরও অনেক অভিযোগ উঠেছিল তখন।

২০০৯ সালে সরকার ‘২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন’ গঠন করে। কমিশনের কাছে খুন, ধর্ষণসহ ৩ হাজার ৬২৫টি অভিযোগ জমা পড়ে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, প্রায় ১০০টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররা প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রভাব রাখতে পারেন। এসব আসনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার আছেন। কোনো আসনে ২০ শতাংশ, কোনোটিতে ৫০ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সারা দেশে গণনা করে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের একটি পরিসংখ্যান দেয় প্রতি ১০ বছর পর। তা থেকে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষ, তা জানা যায়। ধারণা করা হয়, ভোটার তালিকায় সেই অনুপাতে সংখ্যালঘু ভোটার আছেন।

দেশে প্রথম আদমশুমারি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখন জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর। এরপর আরও চারটি আদমশুমারি হয়। প্রতিবার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার কমতে দেখা গেছে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারিতে সংখ্যালঘু ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের শুমারিতে ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭ ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে সংখ্যালঘু ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

সংখ্যালঘু কমে যাওয়ার এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ৯ শতাংশ হতে পারে। ভোটারের হারও তা-ই হওয়ার কথা। দেশে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০। সেই হিসাবে দেশে সংখ্যালঘু ভোটারের অনুমিত সংখ্যা প্রায় ৯৪ লাখ।

রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, দেশে সংখ্যালঘু মানুষ কমছে, ভোটারও কমছে। কিন্তু সংখ্যালঘুর প্রকৃত পরিসংখ্যান ভোটার তালিকায় বা আদমশুমারির প্রতিবেদন, কোনোটিতেই পাওয়া যায় না।