বিএনপির প্রার্থীর গাড়িতে হামলা অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের ব্যক্তিগত গাড়িতে উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত শনিবার চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জালালউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় ওই দিন রাতে মো. টিটু নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেছেন। এতে বিএনপিরই স্থানীয় ২৫-২৬ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যদিও বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চত্বরের স্মৃতিসৌধে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফুল দিতে যান বিএনপির প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুব। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ফুল দিয়ে ফেরার পথে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুন্নাহার টুনিসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী খালেদ হোসেনের গাড়িতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুন্নাহার টুনি অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিজয় মিছিল করছিলাম। সে সময় একটা গাড়ি আমাদের মিছিলের ভেতরে প্রবেশ করে। এটা বিএনপির প্রার্থী নাকি অন্য কারও গাড়ি ছিল, তা জানি না। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে কিনা তা জানি না। তবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মী কোনো হামলা করেনি।’
বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সামনেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাডো) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। নেতা-কর্মীরাও আহত হয়েছে। পুলিশ কিছুই করেনি। ’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলেছে। বিষয়টি শুনেছি। আওয়ামী লীগের লোকজন বিজয় মিছিল করছিল বলে শুনেছি। তবে বিএনপির প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।’
এদিকে গত শনিবার বিকেল তিনটার দিকে বিএনপির প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুবের স্ত্রী বিজয়নগর উপজেলায় গণসংযোগে যান। এ সময় চরইসলামপুরে প্রচারণায় গেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তানভির ভূঁইয়ার নির্দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রচারণার একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই দিন রাত পৌনে নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা হামলার শিকার গাড়িটি সাংবাদিকদের দেখাতে প্রেসক্লাবে নিয়ে আসেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে জহিরুল হক অভিযোগ করে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্য হুমকি দিয়ে আসছেন।
এদিকে গত শনিবার চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জালালউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় ওই দিন রাতে মতলব উত্তর থানায় মামলা হয়েছে। এতে বিএনপিরই স্থানীয় ২৫-২৬ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছে লুধুয়া গ্রামের মো. টিটু নামের এক ব্যক্তি। যদিও বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালায়।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ১২টায় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জালালউদ্দিন মতলব উত্তর থানার লুধুয়া গ্রামে তাঁর নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জালালউদ্দিন ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এতে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে জালালউদ্দিন তাঁর বাড়িতে অবস্থান নেন।
এদিকে জালালউদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মতলব পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাদল অভিযোগ করেছেন, জালালউদ্দিনকে তাঁর নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. কবির হোসেন বলেন, পুলিশ বিএনপির প্রার্থীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন। হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে লুধুয়া গ্রামের মো. টিটু নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে স্থানীয় বিএনপির ২৫-২৬ নেতার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।