উন্নয়ন নিয়ে বাগ্যুদ্ধ, তবে প্রতিশ্রুতিতে একই সুর

সারা দিন রোদের দেখা ছিল না। বিকেলের দিকে ফোঁটায় ফোঁটায় কিছু শিশিরবৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। গতকাল সোমবার সিলেটে এমন বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও থেমে ছিল না নির্বাচনী প্রচারণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনের প্রার্থীরা নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন। করেছেন একাধিক পথসভাও।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন ও বিএনপির খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে সিলেটের উন্নয়ন হওয়া না–হওয়া নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধে জড়ালেও সিলেটের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিতে দুজনের কথায় একই সুর শোনা যাচ্ছে। ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে মোমেনের বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন। মোমেনও সেই আলোকিত সিলেটকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মুক্তাদীর বলছেন, সিলেটকে একটি উন্নত ও আদর্শ এলাকা গড়তে ভূমিকা রাখবেন তিনি।

সকালে এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মুহতারাম সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় দুটি সংগঠনেরই স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নগরের সোবহানীঘাট এলাকার আল ইসলাহর বিভাগীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় হয়। এ সময় এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় খাদ্য ঘাটতি কমেছে। সিলেট শহর ডিজিটাল শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ৩ হাজার সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় অপরাধ কমেছে। এখন মসজিদে বোমাবাজি হয় না। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। সারা দেশে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়েছে। আমার বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিগত ১০ বছরে যে উন্নয়ন করেছেন, তা অতীতে হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে আমার ভাইয়ের মতো সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহনুর, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ কে এম মনোওর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, অর্থ সম্পাদক আবু সালেহ মো. কুতুবুল আলম প্রমুখ। এরপর এ কে আবদুল মোমেন তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন।
বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর সকালে নগরের আদালতপাড়া, বন্দরবাজার ও মহাজনপট্টি এলাকায় ধানের শীষের সমর্থনে আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা, বাক্‌স্বাধীনতা এবং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধসহ সামাজিক মূল্যবোধ সমন্বিত ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা থেকে ক্রমেই দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। ফলে আওয়ামী লীগও ক্রমেই জনতার কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। এখন সাধারণ মানুষের কাছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা তার দোসরদের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই দেশের মানুষ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাঁদের গণতান্ত্রিক রায় দেবে।

খন্দকার মুক্তাদীর আরও বলেন, ‘সিলেট-১ আসনসহ সারা দেশে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করে কারারুদ্ধ গণতন্ত্রকে আবার মুক্তির আলোয় নিয়ে আসতে দেশপ্রেমিক জনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জনতার রায়কে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবেই। বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে, এটা নিশ্চিত।’
গণসংযোগকালে আবদুল মুক্তাদীরের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফফার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সভাপতি এ টি এম ফয়েজ, গণফোরাম সিলেটের আহ্বায়ক আনসার খান, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমদ পাটোয়ারী, পেশাজীবী নেতা বদরুদ্দোজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিকেলে তিনি নগরের সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, লালদিঘিরপাড়, কালীঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা রেদওয়ানুল হক চৌধুরী গতকাল বেলা ১১টায় নগরের বালুর মাঠ, টার্মিনাল এবং রেলস্টেশন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি যানজট, জলাবদ্ধতা এবং ভেজালমুক্ত সিলেট গড়তে হাতপাখা প্রতীকে ভোট চান। তাঁর সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ইসহাক আহমেদ, অর্থ সমন্বয়কারী আবদুল ওয়াহিদ, সংগঠনের সিলেট মহানগর শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী হারিকেন প্রতীকের সমর্থনে গতকাল দিনব্যাপী নগরের কুশিঘাট, বুরহানাবাদ, টুলটিকর, মেন্দিবাগ, বন্দরবাজার এবং জিন্দাবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি জানান, গণঐক্যের অঙ্গীকার, দেশ হবে জনতার-এ স্লোগান সামনে রেখে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রার্থী উজ্জল রায় গতকাল সকালে সিলেট সদর উপজেলার মেজরটিলা এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর তিনি কান্দিগাঁও ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জয় কান্ত দাস, রুবেল মিয়া, প্রসেনজিৎ রুদ্র, তৌহিদুজ্জামান জুয়েল, ফাহিম আহমেদ চেীধুরী প্রমুখ। বাংলদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রণব জ্যোতি পালও (মই) গতকাল নগরে গণসংযোগ করেছেন।
এ আসনের অপর প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) মুহম্মদ ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ (আম) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা নাসির উদ্দিন (বটগাছ)।