পুলিশের মামলায় বাড়িছাড়া ধানের শীষের নেতা-কর্মীরা

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে পুলিশের করা দুটি মামলায় তটস্থ যশোরের চৌগাছা উপজেলার জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে কমপক্ষে ১৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অবস্থায় দল দুটির দাবি, নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তাঁরা এখন পুলিশের ভয়ে এলাকাছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
উপজেলা জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ঘটনা ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ দুদিন আগে মামলা দুটি করেছে। এখন ব্যাকডেটে মামলা দুটি দেখানো হচ্ছে।
দল দুটির নেতাদের অভিযোগ, গত ২২ অক্টোবর ও ৮ নভেম্বর তারিখ দেখিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় মামলা দুটি করে। দুটি মামলায় জামায়াত ও বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১৪৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬০–৭০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর নিয়ম অনুযায়ী মামলার নথি, আটককৃত আসামি ও জব্দতালিকা আদালতে পাঠানোর কথা। কিন্তু পুলিশ মামলা হওয়ার পর আদালতে না পাঠিয়ে ফাইলচাপা দিয়ে রাখে। ফলে তাঁরা মামলার বিষয়ে কিছু জানতে পারেননি। হাইকোর্ট থেকে যে আগাম জামিন নেবেন, সে সুযোগও তাঁদের হয়নি।
বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা জানান, গত শুক্রবার থেকে পুলিশ হঠাৎ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মামলা দুটিতে ইতিমধ্যে ১৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। এদিন সন্ধ্যায় মামলার নথি থেকে দেখা যায়, পুরোনো দুটি নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে নির্বাচন রেখে তাঁরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২২ অক্টোবর করা মামলার বাদী চৌগাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কওছার আলম। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২১ অক্টোবর রাত ১০টা ৫৫ থেকে ১১টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর দাখিল মাদ্রাসা মাঠে নাশকতার পরিকল্পনা করতে বৈঠকে বসেন বিএনপি-জামায়াতের ৭৬ জনসহ অজ্ঞাত ৩০–৩৫ জন। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা পালিয়ে যান।
মামলাটির উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন উপজেলা জামায়াতের আমির মুহা. আমীন উদ্দীন খান, নায়েবে আমির গোলাম মোর্শেদ, নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম, হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাসুদুল হাসান, চৌগাছা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল কাদের ও হাকিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন।
৮ নভেম্বর করা মামলার বাদী উপজেলার দশপাকিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ৭ নভেম্বর রাত ৮টা ২০ থেকে ৮টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দাখিল মাদ্রাসা মাঠে নাশকতার পরিকল্পনা করতে বৈঠকে বসেন বিএনপি-জামায়াতের ৬৮ জনসহ অজ্ঞাত ২৫–৩০ জন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা পালিয়ে যান। মামলায় উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল কাদের, সহকারী সেক্রেটারি কামাল আহমেদসহ ৬৮ জনকে আসামি করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ফোনে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কাউকে নির্বাচনের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। আমাদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আইনের মধ্যে থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের ঘায়েল করার জন্য পুলিশ কৌশলে মামলা দুটি করেছে। এখন সেই মামলায় গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দুটি মামলা হয়েছে, সেটাই এত দিন আমরা জানতে পারিনি। গ্রেপ্তারের ভয়ে নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে এখন অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
উপজেলা জামায়াতের আমির মুহা. আমীন উদ্দীন খান বলেন, ‘পুলিশ দুদিন আগে মামলা দুটি করেছে। এখন ব্যাকডেটে মামলা দুটি দেখাচ্ছে। পুলিশ ব্যাপক হারে ধরপাকড় ও হয়রানি করছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব দাবি করেন, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। ২২ অক্টোবর ও ৮ নভেম্বর মামলা দুটি হয়েছে। মামলা দুটিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর আর এ ধরনের কোনো মামলা হয়নি। সম্প্রতি মামলা দুটির কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।