সাত জঙ্গি জড়িত, ৩ বছরেও অভিযোগপত্র হয়নি

নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
>* ২০১৫ সালে খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় খুন হন নীলাদ্রি *নীলাদ্রি এনজিওতে কাজের পাশাপাশি ব্লগে লিখতেন
* গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন নীলাদ্রি
* আনসার আল ইসলামের সাত জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য
|* আদালতে তিন জঙ্গির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় হত্যায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সাত জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে সাড়ে তিন বছর পরও পুলিশ ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেয়নি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশ ও পরিকল্পনা এবং সেলিম ওরফে আল হাদীর সমন্বয়ে ব্লগার নীলাদ্রিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নীলাদ্রি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করার পাশাপাশি ব্লগে নিয়মিত লিখতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় খুন হন নীলাদ্রি। তিনি ওই দিন বেলা একটার দিকে ল্যাপটপ কম্পিউটার নিয়ে শোবার ঘরে কাজ করছিলেন। কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দেন নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মণি। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ঘরে ঢোকেন ওই ব্যক্তি। ভেতর থেকে নীলাদ্রি বেরিয়ে এসে লোকটিকে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিতেই আরও তিন দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মণি ও বেড়াতে আসা তাঁর ছোট বোন তন্বীকে আটকে রেখে ছুরি ও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নীলাদ্রির মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা নীলাদ্রির ল্যাপটপ ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। ঘটনার সময় বারান্দায় আটকে থাকা আশা মণি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে খিলগাঁও থানায় আশা মণি একটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসলামকে অবমাননা করা ও মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করার অভিযোগে নীলাদ্রিকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় আনসার আল ইসলাম। ঘটনার দুই-তিন মাস আগে জঙ্গিদের গোয়েন্দা সেলের সদস্যরা নীলাদ্রির গতিবিধি অনুসরণ করা শুরু করে এবং তাঁর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরে দিনক্ষণ ঠিক করে জঙ্গিরা নীলাদ্রিকে হত্যা করে। ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় ১২ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করলেও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক মেজর জিয়া ও সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার হননি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে জঙ্গি খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গি সাদ আল নাহিন, তারেকুল আলম, মাসুম রানা, মাওলানা মুফতি আবদুল গাফ্ফার ও মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির জামিনে আছেন। জঙ্গি খাইরুল, আবু সিদ্দিক, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, শেখ আবদুল্লাহ, সন্দেহভাজন কামাল হোসেন সরদার ও কাউসার হোসেন খান কারাগারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত নীলাদ্রি হত্যায় আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও পরিকল্পনাকারী সাবেক মেজর জিয়া, সমন্বয়ক সেলিম, জঙ্গি খাইরুল, আবু সিদ্দিক, আরাফাত রহমান, মোজাম্মেল হুসাইন ও শেখ আবদুল্লাহ হত্যায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন সাত জঙ্গির নীলাদ্রি হত্যায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
সম্প্রতি যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী আশা মণি বলেন, ‘আশাবাদী হওয়া ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। স্বামীকে তো আর পাব না, ঘাতকদের শাস্তি হলে আত্মা শান্তি পাবে।’ তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময় আমি কয়েকজন খুনিকে দেখেছি। কিন্তু ওই সময় আমার মাথায় কিছুই কাজ করেনি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আমাকে দেখানো হয়েছিল। তাদের চিহ্নিত করতে পারিনি।’