পরিবেশে সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ, ভোট নিয়ে শঙ্কা বিএনপির

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে।  সৌরভ দাশ
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে। সৌরভ দাশ

নির্বাচনের দিন ভোটাররা আদৌ ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা। সরকারি দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি পুলিশও কোথাও কোথাও তাঁদের পোস্টার তুলে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার সার্কিট হাউস এবং জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা এই অভিযোগ করেছেন। একই সভায় আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের অনেক প্রার্থী চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে জামায়াতের কারণে পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার আশঙ্কাও করেন কেউ কেউ।

সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম নগর এবং নগরের সঙ্গে সংযুক্ত ছয়টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে বেলা ১১টা থেকে মতবিনিময় করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান। অন্যদিকে জেলার ১০ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় করেন অপর রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, ভোট দেওয়া যাবে কি না? বিএনপির নেতা–কর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ৩০ তারিখের আগেই যেন দেশের সব বিচার শেষ করে ফেলা হবে।

রাজনৈতিক দলের পক্ষ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে গ্রেপ্তার অভিযানটা বন্ধ করুন। আমার প্রচারণায় পুলিশ ভিডিও করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে নেতা-কর্মীদের ধড়পাকড় করছে।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘নয়াবাজারে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করার সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা করা হয়। আমি পুলিশের কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।’

তিনি বলেন, ‘আমার পোস্টার-ব্যানার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশও ধানের শীষের পোস্টার-ব্যানার দেখলে কেটে ফেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে।’

চট্টগ্রাম-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-৪ আসনের ইসহাক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনের সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেন।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে কোন ভয়ভীতি দেখছি না। ২০০৫ সালের নির্বাচনে (সিটি করপোরেশন নির্বাচন) গুলি করে শ্রমিক লীগের ছয়জন নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। যদি কোনো অভিযোগ কিংবা পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করে তাহলে নিন্দনীয়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের নামে তাঁরা যে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, মানুষের মধ্যে ভয় থাকলে সে জন্যই আছে। আমিও ভয় পাচ্ছি যেকোনো সময় আমার এলাকায়ও তাঁরা হামলা করতে পারেন। কারণ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি দল এখন বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছে।’

এ সময় আমীর খসরু প্রতিবাদ করে বলেন, এটা রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জায়গা নয়।

এরপর নওফেল বলেন, ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের বলা হচ্ছে, ইভিএম নাকি খুব কঠিন।

একই আসনে বিএনপির প্রার্থী কারাবন্দী নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের প্রতিনিধি এস এম বদরুল আনোয়ার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপারও রাখার প্রস্তাব করেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হবে। একটা নির্বাচনে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে তা নয়। ভিন্ন পার্টির বলে মতের ভিন্নতা থাকবে। ’

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পাশে বিএনপি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং নৌকার প্রার্থী মঈন উদ্দীন খান বাদল। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে।  প্রথম আলো
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পাশে বিএনপি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং নৌকার প্রার্থী মঈন উদ্দীন খান বাদল। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে। প্রথম আলো

এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনীর হোসাইন খান। সভায় চট্টগ্রাম-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার ১১টি মাইক ভাঙচুর করেছে। এলাকায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও প্রশাসন যাতে বৈষম্যমূলক আচরণ না করে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, ইউসিবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, যাচাই-বাছাই ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১২ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সবাই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তাঁর এলাকায় সব প্রার্থী মিলেমিশে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। প্রার্থীরা তা ধরে রাখতে সহযোগিতা করবেন।

কোনো ধরনের গায়েবি মামলা করা হচ্ছে না বলে সভায় দাবি করেন জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা।