মহাজোটে টানাপোড়েন

>

• জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত রংপুর
• রংপুরে ৬ আসনে ৩৯ জন লড়ছেন
• ৩ টিতে নৌকা ও লাঙ্গল উন্মুক্ত নির্বাচন
• তিন আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনে মোট ৩৯ জন লড়ছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন প্রার্থী এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রচারণায় সরব থাকলেও বিএনপি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।

সব প্রার্থীই মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, স্থানীয় সমস্যার সমাধান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ নানা প্রতিশ্রুতির কথা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। প্রার্থীরা ছুটছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। শীতের মধ্যেও তাঁরা নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। নেই কোনো সহিংস ঘটনা।

এদিকে জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত রংপুরে মহাজোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপোড়েন মেটেনি। ছয়টি আসনের তিনটিতে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে উন্মুক্ত নির্বাচন হচ্ছে। অন্য তিন আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী রয়েছেন। উন্মুক্ত নির্বাচন হচ্ছে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ), রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) ও রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে।

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া)
এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। তিনি আবার নির্বাচিত হতে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচিত হলে ফুল মন্ত্রী হব। অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করব।’

এ আসনে নৌকার প্রার্থী নেই। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। নির্বাচন করব বলে অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছি। নির্বাচিত হলে অবহেলিত এলাকার উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখব।’

এখানে মহাজোটের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জোর লড়াই হবে বলে মাঠপর্যায়ে ঘুরে জানা গেছে। এ ছাড়া ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন নাগরিক ঐক্যের শাহ রহমতুল্লাহ। আরও আছেন মোক্তার হোসেন (ইসলামী আন্দোলন), ইশা মোহাম্মদ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), সি এম সাদিক (স্বতন্ত্র)।

রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ)
দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে মহাজোটের কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী নেই। মহাজোটের শরিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের তিনজন প্রার্থী আছেন। এই তিন দলের প্রার্থীরই সামাজিক অবস্থান ভালো বলে মাঠপর্যায়ে ঘুরে জানা গেছে। এখানে নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ ও মশাল মার্কার চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বদরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আসাদুজ্জামান সাবলু চৌধুরী লাঙ্গল এবং জাসদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কুমারেশ রায় মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। আর জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী সরকার এবার বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন আশরাফ আলী (ইসলামী আন্দোলন), হারুন অর রশিদ (বিকল্পধারা), আশরাফ উজ জামান (জাকের পার্টি), আনিসুল ইসলাম মণ্ডল (স্বতন্ত্র)।

রংপুর-৩ (সদর)
এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করলেও তাঁর পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। তবে দলের পক্ষ থেকে তেমন প্রচারণা নেই। নেই নির্বাচনী উত্তাপও। ভোট নিয়ে ভোটারদেরও নেই কোনো উদ্দীপনা।

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পিপলস পার্টির প্রার্থী রিটা রহমান ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন বটে। তিনি কিন্তু এলাকায় একেবারে নতুন। প্রার্থী মনোনয়নে স্থানীয় বিএনপি তাই ক্ষুব্ধ। তবে এখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিলেমিশে কাজ করছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়ালের প্রচারণা এবং ভোটের মাঠে তাঁর আলোচনা অনেক বেশি।

এখানে অন্য প্রার্থীরা হলেন সাব্বির আহমেদ (পিডিপি), আনোয়ার হোসেন (বাসদ), আলমগীর হোসেন (জাকের পার্টি), তৌহিদুর রহমান মণ্ডল (খেলাফত মজলিস), সামসুল হক (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি)।

এদিকে এ আসনের ১৭৫টি কেন্দ্রেই থাকছে না কোনো ব্যালট বা ব্যালট বাক্স। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া)
এ আসনে মহাজোটের দুই শরিক আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি নৌকা প্রতীকে এবং জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম (বেঙ্গল) লাঙ্গল নিয়ে লড়ছেন। এ নিয়ে মহাজোটে কিছুটা টানাপোড়েন রয়েছে। এ ছাড়া ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শক্ত প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা রয়েছেন। নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষের ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে মাঠপর্যায়ে ঘুরে জানা গেছে।

অন্য প্রার্থীরা হলেন আবদুস সাদেক (বাসদ), বদিউজজামান (ইসলামী আন্দোলন), আঞ্জুমান আরা বেগম (জাকের পার্টি)।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর)
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুই দলেরই প্রার্থী আছেন এখানে। আওয়ামী লীগের সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমান ও জাতীয় পার্টির ফখর উজ জামান (জাহাঙ্গীর) লড়ছেন এ আসনে। এ ছাড়া জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন শামীম মিয়া (জাকের পার্টি), মমিনুল ইসলাম (বাসদ), শফিকুল ইসলাম (ইসলামী আন্দোলন)।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ)
এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি এলাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয়ী হন। উপনির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ সাংসদ হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয়ী হন। পরে উপনির্বাচনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংসদ নির্বাচিত হন। এখানে এবার লড়ছেন স্পিকার। বিএনপি থেকে এবার প্রথম লড়ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

নির্বাচনী প্রচারণায় শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এই সরকারের আমলে উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দিনাজপুরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য করতোয়া নদীর ওপর এম এ ওয়াজেদ মিয়া সেতু নির্মিত হয়েছে। মেরিন একাডেমির নির্মাণকাজ চলছে। মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট হয়েছে। অন্য প্রার্থীরা হলেন কামরুজ্জামান (সিপিবি), বেলাল হোসেন (ইসলামী আন্দোলন), হুমায়ুন এজাজ (এনপিপি), মাসুদ সরকার (বিএনএফ)।