দ্বন্দ্ব ভুলে ভোটের মাঠে বঞ্চিতরা

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নান। তাঁর পাশেই বসা মনোনায়নবঞ্চিত সৈয়দ সাজিদুর রহমান।  ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নান। তাঁর পাশেই বসা মনোনায়নবঞ্চিত সৈয়দ সাজিদুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসন পাঁচটি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অর্ধশত। এখানে দুই দলেই দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে সেই পুরোনো দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়নের পর নির্বাচনী মাঠ ধীরে ধীরে ‘গরম’ হয়েছে। এরপর ‘নরম’ হয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতাই। তাঁরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে বিএনপির ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। দুটি দলই জেলায় একটি করে আসন তাদের জোটের শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। আর সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা সাবেক সাংসদ শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১০ জন। শেষমেশ দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগের দিন সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় প্রধানের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে মোয়াজ্জেম হোসেনকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এখন ওই সাতজনের মধ্যে অনেকেই নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তাঁদের একজন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার পক্ষে আমরা সবাই। প্রার্থী কে হলেন, সেটা বিষয় নয়। আমরা নৌকার জয় চাই। তাই নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছি।’
সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পাঁচজন। প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পান তিনজন। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের সাবেক সাংসদ নজির হোসেন। এখন মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনিসুল হক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, যুক্তরাজ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হককে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন নজির হোসেন।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে গণসংযোগকালে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী নজির হোসেন। তাঁর পাশে বসা দলের মনোনয়নবঞ্চিত হামিদুল  হক।  ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জ-১ আসনে গণসংযোগকালে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী নজির হোসেন। তাঁর পাশে বসা দলের মনোনয়নবঞ্চিত হামিদুল হক। ছবি: প্রথম আলো

কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘মনোনয়ন চেয়েছিলাম, পাইনি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত সবাইকেই মানতে হবে। আমরা সবাই এখন ধানের শীষের পক্ষে, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে আছি।’
সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই ও শাল্লা) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১১ জন। এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ জয়া সেন গুপ্তা। এই আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন। এখন তাঁরাও দল বেঁধে মাঠে নেমেছেন নৌকার পক্ষে।
এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দুজন। এর মধ্যে সাবেক সাংসদ নাছির চৌধুরী মনোনয়ন পান। এরপরই অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তাহির রায়হান চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে নাছির চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পাঁচজন। কিন্তু নৌকা পান বর্তমান সাংসদ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। এখানে তাঁর সঙ্গে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আজিজুস সামাদ আজাদের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। কিন্তু গত রোববার জগন্নাথপুরে সমাবেশ করে সবাই ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে নৌকার পক্ষে।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাতজন। তবে দলটি কোনো প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়তের নেতা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। বিএনপির সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েন থাকলেও এখন সবাই তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চারজন। কিন্তু আসনটি এবারও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এখন সবাই মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই আছেন। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন চারজন। মনোনয়ন পান দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ ফজলুল হক আছপিয়া। দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে এখন সব মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাই তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পাঁচজন। চূড়ান্ত মনোনয়ন পান বর্তমান সাংসদ মুহিবুর রহমান। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাঁর সঙ্গে মাঠে নেমেছেন, কাজ করছেন নৌকার পক্ষে।
এখানে বিএনপির দুই নেতার মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র লড়াই ছিল। চূড়ান্ত মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী। মনোনয়নবঞ্চিত হন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন। সমর্থকেরা প্রথম দিকে বিক্ষোভ ও প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুললেও কলিমই পরে তাঁদের শান্ত করেন। তিনি সব নেতা-কর্মীকে ধানের শীষের পক্ষে মাঠে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকেই চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের সবার কথা ছিল ধানের শীষ যিনিই পাবেন, আমরা তাঁর পক্ষে থাকব। এখন আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির বলেন, ‘আমরা সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনেই মহাজোটের বিজয় চাই। নেতা-কর্মীরা মাঠে আছেন। আশা করি এবারও সব কটি আসনে আমরা জয়ী হব।’