এক ভয়ংকর সেপ্টেম্বর!

>
তথ্যসূত্র: পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইট police.gov.bd
তথ্যসূত্র: পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইট police.gov.bd

*এক মাসেই ৫৭৮টি নাশকতার মামলা
*পুলিশের ওপর ৯০টি হামলার তথ্য
*এত ‘সন্ত্রাস’, তবু নগর ছিল শান্ত
*জীবনযাত্রা ছিল একদম স্বাভাবিক
*বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসামি
*আসামিদের ধরতে বিশেষ অভিযান

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা শহরে আসলে কী ঘটেছিল? ওই মাসে নাশকতার মামলা হয়েছে ৫৭৮টি। প্রায় সব মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলার তথ্য বলছে, পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে ৯০ বার। ওই মাসে উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ১৮৬টি ককটেল ও ৩৭০টি পেট্রলবোমা।

পুলিশের ওপর এমন হামলা এবং ককটেল-পেট্রলবোমা উদ্ধারের এই সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। যে বছরগুলোতে শহরময় জ্বালাও-পোড়াও আর সংঘাত ছিল, তখনো পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এর অর্ধেক মামলাও হয়নি।

আর এ বছরের সেপ্টেম্বরে শহরময় পুলিশের ওপর এত হামলা, সহিংসতা হলেও কিছুই টের পায়নি ঢাকা শহরের মানুষ। জীবনযাত্রা ছিল একদম স্বাভাবিক।

ওই মাসে নাশকতার অভিযোগে শুধু ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় ৫৭৮টি মামলা হয়েছে বলে আদালত ও পুলিশ সূত্রে এখন পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এখন এই আসামিদের ধরতে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পালিয়েই বেড়াচ্ছেন।

সেপ্টেম্বর ছাড়াও গত অক্টোবর, নভেম্বরেও নাশকতার মামলা হয়েছে। অক্টোবরে ৭৬টি ও নভেম্বরে ৪৩টি নাশকতা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি মাসেও মামলা করার এ ধারা চলছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের ১ হাজার ৫০৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামির সংখ্যা ছয় শতাধিক। পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে বলেছে, এসব নেতা-কর্মী নাশকতার সঙ্গে জড়িত। এসব মামলায় ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানা এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত, পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং নাশকতার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এই আসামিদের গ্রেপ্তারে চলতি মাসে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। ডিএমপির দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে নতুন ছক। যাতে লেখা রয়েছে, ‘চলমান সহিংস ঘটনায় ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারের তালিকা’। ওই তালিকা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই ঢাকার ৫০ থানায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চেয়ে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কোনো কথা বা কোনো রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসে এত নাশকতার মামলা সংখ্যার দিক থেকে অবশ্যই বেশি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত, এ ব্যাপারে জবাবদিহি করা। নির্বাচনের সময় এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না করা হয়, যাতে কারও মনে শঙ্কা তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এটাও মনে রাখতে হবে, বিনা অপরাধে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।

পুলিশের করা মামলার নথি থেকে হিসাব করে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় কয়েক শ ককটেল বিস্ফোরণের তথ্য পাওয়া যায়। তবে এসব মামলার কাগজে ককটেল বিস্ফোরণের যেসব ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক মাসে এ রকম ৩৪টি মামলার ঘটনাস্থল সরেজমিনে ঘুরে ককটেল বিস্ফোরণ, জমায়েত বা নাশকতার তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা অনেক মামলা পরিচালনা করছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান। তাঁর দাবি, সবই ‘গায়েবি’ মামলা। এসব মামলায় বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে। কারণ, তাঁরাই নির্বাচনের প্রধান চালিকাশক্তি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে পুলিশ ঢাকাসহ সারা দেশে বিপুলসংখ্যক গায়েবি মামলা করেছিল। এখন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পুলিশ হন্যে হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।

তবে একজন আইন বিশেষজ্ঞের মতে, পুলিশের উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক এ কারণে যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ২৬ নভেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১২২ জনে। তখন যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছিল, সেটা ভুলে যাওয়ার কথা না। কিন্তু তফাতটা হলো, তখন আসলেই ঘটনাগুলো ঘটেছিল। মানুষ নিজ চোখে, টিভির পর্দায় দেখেছে। পরদিন পত্রিকায় পড়েছে, বীভৎস ছবিও দেখেছে। আর গত সেপ্টেম্বরের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তা কেউ দেখেনি। এসব কোনো পত্রিকায়ও ছাপা হয়নি, কোনো টিভি চ্যানেলও সম্প্রচার করেনি।

পুলিশের ওপর যত হামলা
পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় পুলিশের ওপর ৯০টি হামলা হয়েছে। একই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে এ হামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৪, মার্চে ৮, এপ্রিলে ১০ আর মে মাসে হয়েছে ৮টি হামলা। তবে আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ওপর হামলার মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫। ওই সময় শিক্ষার্থী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশকে মারধর, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে পুলিশের ওপর হামলার মামলা বেড়ে ৯০ কী করে হলো, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

ঢাকার যেসব থানা এলাকায় নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ মামলায় বলেছে, এমন থানাগুলোতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে মামলা হয়েছে। আসামি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার একজন সহকারী কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব এলাকার বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের তালিকা তাঁদের হাতেই আছে। সম্প্রতি পুলিশের তৈরি করা নাগরিক তথ্যভান্ডারে (সিআইএমএস) নাম ধরে খুঁজলে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় চলে আসে। এসব ব্যবহার করেই পুলিশ মামলাগুলো করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও মামলা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন।

ঘটনা না ঘটলেও মামলা হচ্ছে, এই কল্পিত ঘটনার উৎস কী—জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, পুরোনো রাজনৈতিক সংঘাতের মামলাগুলোর ওপর নাম, তারিখ ও ঘটনাস্থল বদলে নতুন মামলাগুলো করা হচ্ছে। অনেকটা অনিচ্ছায় তাঁদের এ কাজ করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশেই মামলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হলেও সেগুলো সব নিয়ন্ত্রণ থাকে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর। তদন্ত পর্যায়ে যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে, তা হলে তিনি আদেশ দিতে পারেন। দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারেন।

পুলিশের আরেকজন সাবেক মহাপরিদর্শক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার সব সময় পুলিশকে নানা কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। আগে এই ব্যবস্থাটা এমন ছিল যে সরকার কোনো অন্যায় আদেশ দিলে পুলিশ সহজে মানত না। এখন সেই সংস্কৃতি নেই। এখন পুলিশ যা করছে, তা আমার ৩০ বছরের চাকরিজীবনে ভাবতেও পারিনি। পুলিশ এখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় মিশে গেছে। আমার শঙ্কা হলো, এসব করার পর এই বাহিনীর চেইন অব কমান্ড থাকবে তো? যদি না থাকে তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভয়ংকর সেপ্টেম্বর
মামলার তথ্য থেকে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ৩০ সেপ্টেম্বর। ওই দিন নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে ৩০টি থানায় ৪০টি মামলা হয়। পুলিশের মামলার হিসাবে ওই দিন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের জন্য নেতা-কর্মীরা একত্র হয়ে নাশকতার চেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ আনা হয়। পুলিশের দেওয়া তথ্যে আরও জানা যায়, ওই এক দিনেই ঢাকার কয়েকটি থানা এলাকার রাস্তা বন্ধ করে পুলিশকে হত্যার জন্য লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। তবে এসব ঘটনা ঘটার কোনো খবর গণমাধ্যমে আসেনি।

মামলার তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিনই ঢাকা মহানগরের কোথাও না কোথাও পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বোমা ফুটেছে। এ ছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর একযোগে ২০টি থানা এলাকায়, ২০ সেপ্টেম্বর ১৮টি থানা এলাকায়, ১৭ সেপ্টেম্বর ১৫টি থানা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

প্রথম আলোর হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানার মধ্যে সেপ্টেম্বরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সবচেয়ে বেশি নাশকতার মামলা হয়েছে। ওই মাসে এ থানার ২৬টি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতামূলক অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ থানায় প্রথম মামলা হয় ১ সেপ্টেম্বর। আসামি করা হয় বিএনপির ২৮ নেতা-কর্মীকে। এরপরের দিনগুলোতে বিরতি দিয়ে মামলা হয়েছে। আর ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই এ থানায় দুটি করে মামলা হয়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বর ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বিএনপির ১৪৫ জন নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলায় সিকদার সিএনজি পাম্পের সামনে বেলা সোয়া তিনটায় ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়। অথচ সিকদার সিএনজি পাম্পের কর্মীরা ওই ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারেননি। এই পাম্পের একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের পাম্পের সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর কোনো ককটেল ফোটেনি।’

এক মাসে এ রকম ৩৪টি ঘটনাস্থল ঘুরে এসব বিস্ফোরণের কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।

বিস্ফোরক মামলা
নির্বাচন সামনে রেখে আগের মতো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তোড়জোড় শুরু না হলেও ইতিমধ্যে ককটেল ও পেট্রলবোমা উদ্ধারে অতীতের রেকর্ডগুলো ভেঙে ফেলেছে পুলিশ। ডিএমপির তথ্যমতে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ঢাকায় ১ হাজার ১৮৬টি ককটেল, ৩৭০টি পেট্রলবোমা ও ২০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব উদ্ধারের বিষয়ে বিস্ফোরক আইনে ১৯৬টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারাই বলছেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যখন ঢাকা শহরে মুড়ি-মুড়কির মতো ককটেল ফুটেছে, পেট্রলবোমা ছুড়ে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে, তখনো এত সংখ্যায় বিস্ফোরক মামলা হয়নি।

ডিএমপির বিগত পাঁচ বছরের মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালে (১২ মাসে) ঢাকায় বিস্ফোরক মামলার সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৯৫। এ ছাড়া ওই পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে ৮২ টি,২০১৪ সালে ১০৪,২০১৬ সালে ৮৮ ও ২০১৭ সালে ১০৮টি বিস্ফোরক মামলা হয়েছে। অথচ চলতি বছরের শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ১৯৬টি বিস্ফোরক মামলা হয়েছে। (পরিসংখ্যান সূত্র: পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইট)।

বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াওয়ের সময় ঢাকায় ৫৭০টি ককটেল ও ৪টি পেট্রলবোমা উদ্ধার দেখিয়েছিল পুলিশ। তবে ওই বছর বোমা তৈরির বিভিন্ন রাসায়নিক উদ্ধার হিসেবে দেখানো হয়। ২০১৪ সালে এক বছরে উদ্ধার হয় ২৬৫টি ককটেল ও ৬টি পেট্রলবোমা। ২০১৫ সালে ৬৩০টি ককটেল ও ১৭২টি পেট্রলবোমা, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৭৪৬টি ককটেল ও ৫৭৯টি পেট্রলবোমা এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এক বছরে ১ হাজার ৮৭৯টি ককটেল ও ২ হাজার ৯৯টি পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়। যেখানে সেপ্টেম্বরে মাত্র এক মাসে ককটেল উদ্ধার হাজার ছাড়িয়েছে। এ মাসে ককটেল ও পেট্রলবোমা ছাড়াও ২৭টি নিষ্ক্রিয় ককটেল, ৪০টি বিস্ফোরিত অংশও উদ্ধার দেখিয়েছে পুলিশ। এসবের মধ্যে ১০৮টি ককটেল এবং ১৫টি ককটেলের অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। (তথ্যসূত্র: ডিএমপি)

সাধারণত বড় বড় বোমা উদ্ধার আর গ্রেপ্তারের খবরগুলো পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করেই জানায়। তবে এত ককটেল উদ্ধার হয়েছে রীতিমতো নিঃশব্দে। কী করে এত ককটেল উদ্ধার হলো—জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই কিছু বলতে চাননি।

ঢাকায় এত ককটেল উদ্ধার হলেও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোমা অপসারণ দল কিছুই জানে না। সাধারণত ঢাকার কোথাও বোমা পাওয়া গেলে তা অপসারণ বা নিষ্ক্রিয় করার জন্য ওই ইউনিটের কর্মকর্তাদের ডাক পড়ে। সেপ্টেম্বরে এই ইউনিট ডিএমপির কাছ থেকে মাত্র একটি ডাক পেয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর বদলে সরকারদলীয় কর্মী হয়ে গেছে। অপরাধীদের পরিবর্তে তারা যখন নাগরিকদের হেনস্থা, নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানির হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন আজ হোক বা কাল হোক, যেকোনো সরকারের পক্ষে দেশ পরিচালনা অসম্ভব হয়ে উঠবে। আমাদের দেশটা যেন অকল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইনবহির্ভূত আচরণ