বিএনপির অর্থ নেন আর নৌকা মার্কায় ভোট দেন: প্রধানমন্ত্রী

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সুধা সদনে। ছবি: বাসস
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সুধা সদনে। ছবি: বাসস
>

• বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির সুধা সদনের বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স
• রাজশাহী, নড়াইল, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধায় নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ
• প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের পরিচয় করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি
• আবারও সেবা করার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি একেকটি আসনে তিন থেকে চারজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে এবং এসব আসন তারা অকশনে দিয়ে দিয়েছে। এর মানে, যে যত বেশি টাকা দেবে, সে মনোনয়ন পাবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অবৈধ টাকা ওড়াচ্ছে, এটাই তাদের চরিত্র। তারা নির্বাচনকে হয় বানচাল; না হয় ভোট কারচুপির চক্রান্ত করছে। দেশবাসীকে বলব, তারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তাই জনগণের অর্থ জনগণের কাছে পৌঁছাক। তাদের অর্থ নেন; আর নৌকা মার্কায় ভোট দেন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির সুধা সদনের বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী, নড়াইল, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধায় দলের নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে দেশে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এ ছাড়া অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ জন্য আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও জনগণকে আবারও সেবা করার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।’

জনসভায় শেখ হাসিনা নৌকা ও মহাজোটের প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের পরিচয় করিয়ে দেন এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গ তুলে সংগঠনের মাঠপর্যায়ের জরিপ ও স্থানীয় জনপ্রিয়তার প্রতি গুরুত্ব প্রদানের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সবাইকে আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি। তবে, বিগত নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি, কীভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়, সেভাবেই সে ধরনের প্রার্থী আমরা দিয়েছি।’

বিএনপির ‘ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আরেকটি কথা শুনতে পাচ্ছি, নির্বাচনের সময় তারা মুজিব কোট পরে, নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে গোলমাল করবে; ভোট কারচুপি করবে এবং আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাবে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) একেকজন অগাধ সম্পত্তির মালিক। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবার, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ—বিভিন্ন পন্থায় তারা এত টাকা কামাই করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের টাকার কোনো অভাব নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বিষয় লক্ষ করবেন, নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রচার-প্রচারণায় তারা নেই। কারণ, তারা এখন চক্রান্তে ব্যস্ত, ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। নেতারা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনে নালিশ করে, অন্যদিকে তারা নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করে। আমি আরেকটি জিনিস শুনলাম, তারা ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে। তারা এইভাবে দুর্নীতি, চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের এই চক্রান্ত থেকে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে।’

নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ‘হীরার টুকরা’ আখ্যায়িত করে ভাষণে তাঁর জন্য ভোট প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি সাবেক ৮৮ পুলিশ কর্মকর্তার সংহতি
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন পুলিশের ৮৮ জন সাবেক কর্মকর্তা। এ উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে অশুভ শক্তি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সাধারণ মানুষের ওপর আগুন–সন্ত্রাস চালিয়েছিল, তারা আবার ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লন্ডনভিত্তিক এক অপরাধীর বুদ্ধি-পরামর্শে এ অশুভ শক্তি দুটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একটি হলো, পুলিশের একটা অংশকে কিনে নেওয়া ও অপরটি কিছুসংখ্যক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে পুলিশ বাহিনীর মনোবল দুর্বল করা।’ তিনি বলেন, তাঁর আত্মবিশ্বাস, আগুন–সন্ত্রাসীরা সফল হবে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ৮৮ জন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং আগামী নির্বাচনে দলটির বিজয় ও চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে সম্মত হন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার ও দলের প্রতি সমর্থন দেওয়ায় এই পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি চাকরিরত কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমের সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করবে।