জনতার কাছাকাছি নেতা মাশরাফি

চারপাশ ঘিরে জনতার ঢল। ভিড় ঠেলে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে লেগেছে দেড় ঘণ্টা। সবার প্রিয় মাশরাফি ছিলেন ছাদখোলা গাড়িতে। রাজনীতির মাঠে প্রথম মুহূর্তের অভিজ্ঞতায় যেন ‘অসহায়’ মনে হচ্ছিল খেলার মাঠে ২২ গজের তারকাকে।  ছবি: প্রথম আলো
চারপাশ ঘিরে জনতার ঢল। ভিড় ঠেলে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে লেগেছে দেড় ঘণ্টা। সবার প্রিয় মাশরাফি ছিলেন ছাদখোলা গাড়িতে। রাজনীতির মাঠে প্রথম মুহূর্তের অভিজ্ঞতায় যেন ‘অসহায়’ মনে হচ্ছিল খেলার মাঠে ২২ গজের তারকাকে। ছবি: প্রথম আলো

বেলা আড়াইটা। মধুমতী নদীর কালনাঘাটে হাজারো মানুষের ঢল। ঘাট পার হয়ে ৩০ গজ দূরে মঞ্চ। সেই মঞ্চের দিকে যাওয়ার চেষ্টা মাশরাফির। মানুষের ঢলে সামনে এগোতে পারছেন না। তাঁর দিকে হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকে পড়েছে। কোনোমতে মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছেও উঠতে পারলেন না মঞ্চে।

এ পরিস্থিতি উপস্থিত নেতারাও পারছেন না সামাল দিতে। অসহায় মাশরাফি মঞ্চের পাশ দিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকলেন। তখন তাঁর চারপাশ ঘিরে জনতার ঢল। কিছুদূর সামনে গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিয়ে আশ্রয় নিলেন এক মুদি দোকানে। দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হলো।

গতকাল শনিবার নড়াইলের লোহাগড়ায় কালনাঘাটে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা পৌঁছালে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই প্রথম তিনি নড়াইলে এলেন। নড়াইলে প্রবেশের প্রথম পয়েন্ট কালনাঘাট। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে জনতার ঢল নামে সেখানে। নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদরের একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজা।

রাজনীতির মাঠে প্রথম মুহূর্তের অভিজ্ঞতায় অসহায় মনে হচ্ছিল মাশরাফিকে। যেন সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দল ও লোহাগড়া থানার পুলিশের বিশেষ দল ওই দোকান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান মঞ্চে। সেখানে আধা মিনিট বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ রকম করলে আমি চলাফেরা করব কীভাবে? ভিড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’ বলেন, ‘আমার প্রতীক নৌকা। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নড়াইলবাসীর সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। এরপর আবার দেখা হবে আপনাদের সঙ্গে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

বক্তব্য দেওয়ার সময় মাশরাফির পাশে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান, নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার আবদুল হান্নান, লোহাগড়া পৌর মেয়র আশরাফুল আলম প্রমুখ।

এখানে বক্তব্য দেওয়ার পর মাশরাফি গাড়িতে উঠে রওনা দেন নড়াইল শহরের দিকে। লোহাগড়া-নড়াইল সড়কের দুই পাশে তখন শত শত মানুষের অপেক্ষা। কালনাঘাট থেকে লোহাগড়া বাজার পাঁচ কিলোমিটার পথ। কালনাঘাট থেকে বেলা তিনটায় রওনা হয়ে ভিড় ঠেলে এই পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে তাঁর লাগে দেড় ঘণ্টা। এভাবে এগোতে থাকেন নড়াইলের দিকে। হুডখোলা জিপে করে হাত নেড়ে নেড়ে এগোতে থাকেন তিনি।

মোড়ে মোড়ে বক্তব্যে মাশরাফি বলছিলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আপনাদের শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে।’

মাশরাফি আসবেন। কালনাঘাটে বক্তব্য দেবেন। তাই সকাল ১০টা থেকে আসতে থাকেন লোকজন। দুপুরে নদীর উভয় পাড়ে জনতার ঢল নামে। তাঁকে দেখতে শত শত মানুষ নৌকা ভাড়া করে নদীতে অবস্থান নেয়। ফেরিতে পার হয় তাঁর গাড়ি। ঘাটের ইঞ্জিনচালিত তিনটি নৌকা একসঙ্গে করে সাজানো হয়। সেই নৌকায় করে মধুমতী পার করা হয় তাঁকে। তখন করতালিতে, ‘মাশরাফি’ ‘মাশরাফি’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় এলাকা।

এত দিনে খেলার মাঠের ২২ গজে থাকা নতুন অভিজ্ঞতায় রাজনীতিক মাশরাফি। এবার রাজনীতির মাঠের প্রথম দিনটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে নেতা মাশরাফির। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অসিফ ফকিরও অপেক্ষায় ছিলেন কালনাঘাটে। তিনি বলেন, ‘এমন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের ঢল আগে কখনো দেখিনি।’

লোহাগড়া কলকাকলি ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘লাখ লাখ টাকা খরচ করেও কোনো নেতা এভাবে লোকসমাগম করতে পারত না।’

মাশরাফির বন্ধু ও নির্বাচনী প্রতিনিধি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌমেন চন্দ্র বসু জানান, আজ রোববার ও আগামী বুধবার নড়াইল সদর উপজেলায় এবং আগামী সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার লোহাগড়া উপজেলায় গণসংযোগ করবেন মাশরাফি।