তালিকা ধরে ধরে বিএনপির সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার

খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী বিভিন্ন কেন্দ্রের এজেন্টদের তালিকা ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাঁদের এজেন্ট হিসেবে দেওয়া হতে পারে, তাঁরাও গ্রেপ্তার থেকে বাদ পড়ছেন না। গত মঙ্গলবারই এমন ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে।

এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এই আসনের ধানের শীষের প্রার্থী। শুধু তা–ই নয়, যাঁরা ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে চলছেন বা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এই আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। এজেন্টদের নামের তালিকা ধরে ধরে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার খুলনা নগরের কেডি ঘোষ সড়কে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আমীর এজাজ অভিযোগ করেন, সাদাপোশাকে ডিবি পুলিশ (গোয়েন্দা শাখা), প্রশাসনিক তৎপরতায় বিজিবি ও পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, ভীতি প্রদর্শন, বাড়ি ভাঙচুর, দলীয় প্রচার বন্ধ করতে হুমকি, নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, গণগ্রেপ্তার ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড বানচাল করতে ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে তাঁদের নামের তালিকা ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগের কোনো মামলা নেই। আটক করে আগের ‘গায়েবি’ মামলা বা অন্য কোনো মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাঁদের আদালতের কাছে সোপর্দ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পলাতক থাকা নেতা-কর্মীদের মা–বাবাকেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সন্তানদের হাজির করতে না পারলে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সরকারদলীয় ক্যাডাররা ঘোষণা দিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রে গেলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আর তা না করলে কেউ যেন কেন্দ্রে না যায়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার অসহযোগিতার ব্যাপারে আমীর এজাজ বলেন, কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপারে দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন ‘ওপরে’ কথা বলতে। কিন্তু ‘ওপরটা’ কোথায় সেটাই তো বুঝতে পারছেন না।

ধানের শীষের প্রার্থী অভিযোগ করেন, একটি দল সকাল থেকেই ২৪ ঘণ্টা প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে—তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিএনপি সব ধরনের আচরণবিধি মেনে কার্যক্রম চালালেও তাদের ওপর দমনপীড়ন, অত্যাচার অব্যাহত রাখা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার কোথাও ধানের শীষের পোস্টার নেই। সবই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রচারে গেলে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এত অত্যাচার–নির্যাতনের পরও শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনী মাঠে থাকবে বলে জানান আমীর এজাজ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর এজাজ বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম সেনাবাহিনী নামার পর অবস্থা শিথিল হয়ে যাবে। মানুষ উৎসবমুখর হয়ে যাবে। যাঁরা বোবার মতো রয়েছেন, তাঁরা কথা বলতে শুরু করবেন, কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।’

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, শুধু খুলনা-১ আসন নয়, এমন অবস্থা বিরাজ করছে খুলনার প্রতিটি আসনেই। যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাঁদের দেখতে আদালতে যাওয়ায় আদালত চত্বর থেকেই নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে।