'তারা মালা পইরে আ.লীগে আসতে লজ্জা পাচ্ছে'

‘গ্রামের আর চার-পাঁচ পরিবার রইল, যারা বিএনপি করে। আসলে তারা মালা পইরে আওয়ামী লীগে আসতে লজ্জা পাচ্ছে। তাই প্রকাশ্যে যোগ দিল না। তবে তাঁরা ভোটটা নৌকাতেই দিবে।’ এমনটিই দাবি রাজশাহীর পবার কাঁঠালপাড়া যুবসংঘের ক্রীড়া সম্পাদক আবু হানিফের।

আবু হানিফের বাড়ি পবা উপজেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তাঁর মতে, এ গ্রামের সিংহভাগ মানুষই আওয়ামী লীগের সমর্থক। ২৩ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিনের হাতে হাত রেখে গ্রামের ২৫ জন বিএনপি সমর্থক আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরেকবার যোগদান অনুষ্ঠান হয়েছে। গ্রামের ২০ জন বিএনপি সমর্থক গতকাল আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের হিসাব অনুযায়ী, গ্রামে আর চার-পাঁচটি পরিবার রইল, যারা এখনো সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। বরণমালা পরতে লজ্জা করছে বলেই এসব পরিবার প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগে আসছে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা।

তবে গতকাল দুপুরে কাঁঠালপাড়া গ্রামে যাওয়ার পথে পবার রামচন্দ্রপুর বাজারে একজন ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর নাম আনারুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, এ এলাকার বিএনপির লোকজনকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাঁকেও একদিন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর দাবি, সেখানে ভোট দিতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। সে রকম হলে তিনি ভোট দিতেই যাবেন না।

অবশ্য এ কথা বলার সময় ওই বাজারের অন্তত তিনজন আওয়ামী লীগ সমর্থক এর প্রতিবাদ জানান। আবুল কালাম আজাদ নামের একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ভ্যানচালকের কথার প্রতিবাদ করে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেদিন এ এলাকায় প্রচারে এসেছিলেন, সেদিনও বিএনপির নেতা–কর্মীরা এলাকার পাঁচ জায়গায় বৈঠক করেছেন। এটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হলেও কেউ তাঁদের বাধা দেয়নি।

তবে এরপরেও আনোয়ারুল ইসলাম তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করলেন না। তিনি প্রতিবেদককে কাঁঠালপাড়ায় যেতে বললেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা বিএনপির সমর্থকদের দুটি দোকানও পুড়িয়ে দিয়েছে।

আনারুলের কথা অনুযায়ী কাঁঠালপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির সমর্থক এমন একজনকেও পাওয়া গেল না। গ্রামের দু–একটি জায়গায় ধানের শীষের পোস্টার দেখা গেল। ঘুরতে ঘুরতে একটি পুকুরপাড়ে স্থাপিত আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ের সামনে কথা হয় কাঁঠালবাড়িয়া যুবসংঘের ক্রীড়া সম্পাদক আবু হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই গ্রামের মোট ভোটার ৭৪২ জন। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন বিএনপি করেন। ২৩ ডিসেম্বর আবার তাঁদের ভেতর থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ২৫ জন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বাকিরা আজ বিকেলে (গতকাল বৃহস্পতিবার) ফুলের মালা নিয়ে যোগ দেওয়ার কথা।

গ্রামের আলতাফ হোসেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি বললেন, তিনিও একসময় আওয়ামী লীগ করতেন। মাঝখানে বিএনপিতে গিয়েছিলেন। এখন সবাই আওয়ামী লীগ করছেন, তাই তিনিও আবার যোগদান করেছেন।

কাঁঠালপাড়া থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যায়। ফেরার পথে পাশের ভালাম গ্রামে গিয়ে আবদুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির পুড়িয়ে দেওয়া দোকান দেখা গেল। তবে আবদুল কুদ্দুস বললেন, রাতে কে বা কারা পুড়িয়ে দিয়েছে, তা তিনি জানেন না। তিনি বিএনপি করেন কি না, জানতে চাইলে অবশ্য তিনি কোন দলের সমর্থক তা স্পষ্ট করে বললেন না। শুধু বললেন, এখানে বিএনপির কার্যালয় করার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগেরটা ঠিকই আছে।