পোলিং এজেন্টরা আতঙ্কে

>

গাইবান্ধা–১ ও গাইবান্ধা–৫ আসনের বিএনপির সমর্থক ও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে পুলিশ নিষেধ করে দিয়েছে।

গাইবান্ধা-১ ও ৫ আসনে বিএনপির কর্মী–সমর্থক ও পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল শুক্রবার গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) ও গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের বিভিন্ন এলাকায় গেলে বিএনপির কর্মী–সমর্থক ও পোলিং এজেন্টরা এই অভিযোগ করেন। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় হুমকি বেশি দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির এক কর্মী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমি ধানের শীষের প্রচার করছি। এ কারণে গতকাল দুপুরে পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয়। আমি ভয়ে সরে পড়ি। পরে পুলিশ আমার পরিবারকে ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য শাসিয়ে যায়।’

একই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে। কেন্দ্রে গেলে আমাকে গ্রেপ্তার ও আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দেয়।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কদমেরতল এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, যাঁরা ধানের শীষের সমর্থক ও কর্মী, কেবল তাঁদের বাড়িতে গিয়েই কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একই উপজেলার খানাবাড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধানের শীষের জন্য কাজ করছি। তাই শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ বাড়িতে গিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। ভয়ে আমরা কয়েকজন বিলের মধ্যে লুকিয়ে আছি। সেখান থেকেই আপনার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছি।’

খাজা মিয়া নামে সুন্দরগঞ্জের মনমোহনী এলাকার এক ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন না করার জন্য পুলিশ আমাকে হুমকি দেয় এবং ভয়ভীতি দেখায়।’

এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম পুলিশ ধানের শীষ প্রতীকের প্রচার মাইক বন্ধ করছে, ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে এবং আমার কর্মী–সমর্থকদের মারধর করছে। কিন্তু কোনো ফল পাইনি।’

এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সোবহান মুঠোফোনে বলেন, ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়নি। এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়া হয়নি এবং ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে না। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁরা এজাহার নামীয় আসামি। তিনি দাবি করেন, পুলিশ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করছে।

একই ধরনের ঘটনা ঘটছে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের বিভিন্ন এলাকায়। গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীরা বলেন, পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী–সমর্থকদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ তাঁদের বলছে, ৩০ তারিখ কেন্দ্রে গেলে মামলায় পড়তে পারেন। ঝামেলা হতে পারে। তাই কেন্দ্রে না যাওয়াই ভালো।

এই বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির প্রার্থী ফারুক আলম সরকার অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদিন পুলিশ আমার কর্মীদের ধাওয়া দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ধানের শীষে ভোট চাওয়ায় ওমর হোসেন নামের এক কর্মীকে পুলিশ মারধর করেছে। এসব বিষয়ে ২০ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। মানুষ ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার ফলাফল বোঝা যাবে।’

সাঘাটা থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে বলেন, ধানের শীষের কথা বললেই পুলিশ গ্রেপ্তার করার ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশের ভয়ে সাধারণ নেতা–কর্মীরা কাজ করতে পারছে না। এমনকি কর্মীরা রাতেও নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে পুলিশ।

এসব বিষয়ে গতকাল সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ মিথ্যা। কারণ কেন্দ্রে না যেতে বাড়িতে গিয়ে কাউকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে না। যাঁরা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করছেন, ভোট কেনার চেষ্টা করছেন, যাঁদের নামে মামলা আছে, কেবল তাঁদের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। অথচ পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ে পোলিং এজেন্ট পাচ্ছে না বিএনপি

আমাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও -১ ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে পোলিং এজেন্ট নিয়োগে কৌশল নিয়েছে বিএনপি। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে পোলিং এজেন্ট খুঁজেই পাচ্ছে না তারা।

ঠাকুরগাঁও-১ (সদর উপজেলা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ আসনে ১৭৫টি ভোটকেন্দ্রে ৭৭৭টি বুথ রয়েছে। এ আসনে অবস্থান ভালো হলেও পোলিং এজেন্ট পাচ্ছে না বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, যেভাবে দিন-রাত নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় চলছে, তাতে অনেকেই পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। তালিকা বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে। ধরপাকড় এড়াতে পোলিং এজেন্টদের লুকিয়ে থাকতে বলা হয়েছে।