জাপানের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জাপানের মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে। তবে তারা পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমের মতো সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে না পড়ে বরং অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে। জাপানের জাতীয় সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আসাহি শিম্বুন ও কিওদো বার্তা সংস্থা তাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন সরাসরি প্রচার করলেও অন্যরা মূলত আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি, রয়টার্স এবং এএফপি–র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ইংরেজি ভাষার দৈনিক জাপান টাইমস যেমন জাপানের বার্তা সংস্থা জিজি প্রেসের মাধ্যমে পাওয়া এএফপি–র বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন ছেপেছে। সেখানে সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রশংসা করা হলেও একই সঙ্গে ভিন্নমত দমনে নানা পদক্ষেপের আলোকে সরকারের ক্রমশ একনায়কসুলভ মনোভাবের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত যেখানে দেওয়া হয়। তবে সার্বিকভাবে প্রতিবেদনে সরকারের সাফল্যগুলোও তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক বিভিন্ন খাতে গত এক দশকের অগ্রযাত্রা যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশীদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়—তার উল্লেখ করে জঙ্গিবাদ দমন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নেতিবাচক মূল্যায়নের দিক থেকে সরকার বিরোধী একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর উদ্ধৃতি প্রতিবেদনে দেওয়া হয়, যেখানে তিনি বলেছেন সরকার বিরোধীদের দমন করার মধ্যে দিয়ে একক একটি দলের একচেটিয়া প্রাধান্যের এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।

টেলিভিশন সংবাদের মধ্যে নাগরিক সম্প্রচার কেন্দ্র এনএইচকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ দফায় ক্ষমতাসীন হতে যাওয়ার উল্লেখ করলেও বিরোধীদের দাবি করা “প্রহসনের নির্বাচনে”র উদ্ধৃতিও একই সঙ্গে দিয়েছে। খবরে দুই পক্ষের মধ্যে ভোট গ্রহণকালীন সহিংসতার আলোকে নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হওয়ার পর সহিংসতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়। এনএইচকে–র খবরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অন্যান্য দেশের সাহায্য নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ায় নিজের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা

জাপানের নেতৃস্থানীয় দৈনিক আসাহি শিম্বুন ঢাকা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো প্রতিবেদন ছেপেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দেখা দেওয়া অবক্ষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে শেখ হাসিনা উচ্চাশা-পূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর অগ্রাধিকার প্রদান করে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। ভূমিধস বিজয় তাঁর সেই অবস্থানের কারণে অর্জিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনোরকম মন্তব্য না করে বিরোধীদের দাবি করা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগের উল্লেখ করা হয়েছে। একটি আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অপ্রত্যাশিত জয়ের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তিনি নিজে নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করলেও তাঁর জয়লাভ করা আসনটি নিয়ে তিনি কি করবেন তা এখনো পরিষ্কার নয়।

বার্তা সংস্থা কিওদো ঢাকা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল বিশাল বিজয় অর্জন করলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুনভাবে ভোট গ্রহণের দাবি জানানোয় দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জাপানের অন্য দুটি জাতীয় দৈনিক ইয়ুমিউরি শিম্বুন ও মায়নিচি শিম্বুনও এপি এবং এএফপির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর ছেপেছে।