গণধর্ষণের 'ইন্ধনদাতা' সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার হওয়া রুহুল আমিন (ডানে) ও মো. বেচু। নোয়াখালী, ৩ জানুয়ারি। ছবি: মাহবুবুর রহমান
গ্রেপ্তার হওয়া রুহুল আমিন (ডানে) ও মো. বেচু। নোয়াখালী, ৩ জানুয়ারি। ছবি: মাহবুবুর রহমান

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের একটি গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।

সবশেষ গতকাল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য রুহুল আমিন ও মো. বেচুকে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে মো. বেচুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুবর্ণচরের উত্তর ওয়াপদা এলাকার একটি মাছের খামার থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মো. বেচুকে সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় এলাকার একটি ইটভাটা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রুহুল আমিন ও মো. বেচুকে থানা হাজতে আনা হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আগে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো. স্বপন, মো. সোহেল ও বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু।

স্বপনকে গত মঙ্গলবার রাতে এবং সোহেলকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়।

সোহেল এই মামলার প্রধান আসামি।

নির্যাতনের শিকার নারী গত রোববার সকালে এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এ সময় কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন যুবক তাঁকে তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে যুবকেরা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ছালা উদ্দিন, সোহেল, বেচু, মোশারফসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর করেন। পরে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে পুকুরপাড়ে এনে গণধর্ষণ করেন।

নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের লোক।

মামলার এজাহারে মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ ৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও ছালা উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়।

নির্যাতিত নারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের স্থানে রক্ত জমে আছে। তিনি নড়াচড়া করতে পারছেন না।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষাকালে নির্যাতনের শিকার শরীর থেকে সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষার জন্য গতকাল আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে।

চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বাদশা আলম ও স্বপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ঘটনার বিষয়ে কিছু স্বীকার করেননি। আদালতে বাদশা আলমের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীতে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কেউ ছাড় পাবে না। এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে।

সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নির্যাতনের শিকার নারীর সঙ্গে কথা বলেন।

গতকাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহামুদ ফয়জুল কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সেলিনা আক্তারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি দলও ঘটনার তদন্তে নোয়াখালীতে যায়।