এখানে আমি আর আসব না: খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ১২ মিনিটে। তাঁর পরনে ছিল গোলাপি রঙের শাড়ি। খালেদা জিয়া আসার তিন মিনিট পর ১২ টা ১৫ মিনিট বিচারক এজলাসে আসেন। এরপর শুরু হয় নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম।

এজলাস কক্ষে পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি বেশি দেখে ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। আদালতকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আদালতে এত পুলিশ কেন?’।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘লইয়ারদের তো বসতে দিতে হবে।’ তখন দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালত কক্ষে চেয়ার আছে’
তখন খালেদা জিয়া কাজলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কোথায় আছে চেয়ার।’

ডায়াসে দাঁড়ানো মামলার আসামি মওদুদ আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এভাবে কী ফেয়ার ট্রায়াল হতে পারে?’
তখন খালেদা জিয়া আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এ রকম জায়গায় কোনো মামলা চলতে পারে না। আমি আর আসব না।’

এরপর ক্ষুব্ধকণ্ঠে খালেদা জিয়া আবারও বলেন, ‘আমি আর এই কোর্টে আসতে পারব না। আমাদের লোকদের আসতে দেওয়া হয় না। ’ কাজল তখন খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, এটা উন্মুক্ত আদালত। এখানে সবাই আসতে পারেন। কাউকে বাধা দেওয়া হয় না। খালেদা জিয়া তখন ফের বলেন, ‘সাজা দেওয়ার জন্যই আনছেন। সাজা দিয়েছেন। সাজা দেবেন। এখানে আমি আর আসব না।’
খালেদা জিয়ার কথা শেষে মওদুদ তখন আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ইজ ইট এ্যা পাবলিক ট্রায়াল?’ আইনজীবীদের নাম রেজিস্ট্রি করে এখানে আসতে হয়।’ এরপর মওদুদ ফের বলেন, এটা কী উন্মুক্ত আদালত?

মওদুদ তখন বিচারককে জানান, আগের বিচারককে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তখন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান মওদুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমিও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’ অবশ্য শুনানি চলার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আদালত কক্ষে আসেন। তিনিও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।

নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ ১৩ জানুয়ারি ধার্য করে এজলাস ছেড়ে যান বিচারক।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আদালত কক্ষে একান্তে কথা বলেন মওদুদ আহমেদ ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। আজ আদালত থেকে বের হওয়ার পর ছবিটি তোলা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আদালত কক্ষে একান্তে কথা বলেন মওদুদ আহমেদ ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। আজ আদালত থেকে বের হওয়ার পর ছবিটি তোলা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান

এরপর হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার কাছে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ। খালেদা জিয়া কথা বলতে শুরু করেন মওদুদের সঙ্গে।

নিম্ন আদালতে বিচারাধীন নাইকো মামলার বিষয়সহ নানা বিষয়ে খালেদা জিয়া মওদুদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন এজলাসে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
তখন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেখছেন না উনি (খালেদা) কথা বলছেন।

খালেদা জিয়া মওদুদের সঙ্গে কথা বলেই চলেন। একপর্যায়ে পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুইল চেয়ার টান দেন। তখন খালেদা জিয়া রাগান্বিত হন। নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে পুলিশ সদস্যের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘আমার পায়ের যদি কিছু হয়….।’
কথা বলার একপর্যায়ে খালেদা জিয়া মওদুদকে বলেন, ‘খোকন কোথায় খোকন।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন তখন খালেদা জিয়ার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। খোকন তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। খোকন আর খালেদা জিয়ার কথোপকথন চলে প্রায় ৫ মিনিট।

খোকনের সঙ্গে কথা বলার পর খালেদা তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। খালেদা জিয়া সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীকে বলেন, ‘কাগজপত্র পেয়েছেন কী না?’ মওদুদসহ তিনজনের সঙ্গে কথা বলে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকেরা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, ‘আপনার কিছু বলার আছে কি না।’ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই।’

মওদুদ আহমেদ ও মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, খালেদা জিয়া তাঁদের কী বলেছেন? মওদুদ অবশ্য দাবি করেন, নির্বাচন কিংবা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রায় একই কথা বলেন খোকনও।
অবশ্য শুনানির আগে মওদুদ আহমেদ বিএনপিপন্থী এক আইনজীবীর সঙ্গে নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে একান্তে কথা বলেন।

খালেদা জিয়া এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ। তাঁর পক্ষে আদালতে আসা সম্ভব নয়। তিনি ন্যায়বিচারও পাচ্ছেন না। এরপর খালেদা জিয়া আর আদালতে হাজির হননি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। আর গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। সেদিন পুরান ঢাকার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ এই আদালত থেকে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়। সেই থেকে তিনি এই কারাগারে আছেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানি ১৩ জানুয়ারি
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ চলছে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ। মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। আজ অভিযোগ গঠন বিষয়ে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি পড়ে শোনান।

আসামি মওদুদ আহমেদ তিনি শুনানি শুরু করেন। নাইকো দুর্নীতির সঙ্গে মওদুদ আহমেদ জড়িত নন সে ব্যাপারে যুক্তি তুলে ধরেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
আসামিপক্ষ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল দেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক আমিনুল ইসলাম ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।