মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আশা ছাড়ছেন না শরিকেরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলের কোনো নেতা। যদিও জোটগত নির্বাচন করে এবার মিত্র দলগুলো থেকে ৩১ জন সাংসদ হয়েছেন। তবে এখনই হতাশ হচ্ছেন না শরিকেরা। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, মন্ত্রিপরিষদে শরিক দলের সাংসদদের অন্তর্ভুক্তির সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

দশম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় শরিক দলগুলো থেকে ছয়জন মন্ত্রিত্ব পান। একজন মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ছিলেন। আজ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। গতকালই তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায়। তাতে শরিক দলের কারও নাম নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিসভা নিয়ে ১৪ দলে কোনো আলোচনা হয়নি, তাই এটা কেউ জানত না। তবে সবার আশা ছিল, মন্ত্রিসভায় শরিকদের থাকাটাই স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই এর ব্যাখ্যা শরিকদের পরে জানানো হবে।

আজ সকালে ১৪-দলীয় জোটের শরিক দুই দলের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় আসেনি। নতুন মন্ত্রিপরিষদে যাঁদের নাম দেখা যাচ্ছে এবং দপ্তরগুলো যেভাবে বণ্টন হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এক বছরের মধ্যে আবারও মন্ত্রিপরিষদে একটা পরিবর্তন, সংযোজন হতে পারে। ওই দুই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা করলেন সেটা নিশ্চয়ই সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে করেছেন। তাঁরা বলেন, কী হতে যাচ্ছে সেটা জানতে সময় লাগবে।

২০০৯ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিকদের মধ্য থেকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে টেকনোক্র্যাট কোটায় শিল্পমন্ত্রী করা হয়। ওই সরকারের শেষের দিকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন দিলীপ বড়ুয়া। তবে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এই তিনজন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। দপ্তর রদবদল হলেও তাঁরা বর্তমান মন্ত্রিসভায় এখনও আছেন।

আজকে পর্যন্ত রাশেদ খান মেনন সমাজকল্যাণমন্ত্রী, হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পানিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। আজ নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে তাঁদের দায়িত্ব।

তবে নতুন মন্ত্রিসভার তালিকায় কারও নাম না থাকলেও শরিক দলগুলোর কেউ কেউ আশা করছেন, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হবে এবং তাঁরা মন্ত্রিত্ব পাবেন। এ বিষয়ে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কারণে জোট বেঁধেছি, সেটা শেষ হয়ে যায়নি। ঐক্যবদ্ধভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই ভালো কিছু দেখতে পাব ভবিষ্যতে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, শরিক দলগুলোর হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের এমন অনেকেই বাদ পড়েছেন যা কারও অনুমানেও ছিল না। মূলত নতুন নেতৃত্ব সামনে আনার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে সময় বুঝে যা করার সেটা প্রধানমন্ত্রী করবেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, জাসদ (ইনু) থেকে দুজন, তরীকত ফেডারেশন ও জেপি থেকে একজন করে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ২২ জন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে দুজন সাংসদ হয়েছেন এবার।

দশম সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় ছিল। ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পরপরই মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয় দলটির সভাপতি এইচ এম এরশাদকে। তাঁর স্ত্রী ও জাপার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেত্রী। দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পূর্ণ মন্ত্রী এবং মো. মজিবুল হক (চুন্নু) ও মো. মসিউর রহমান রাঙা প্রতিমন্ত্রী হন।

এর আগে ২০০৯-১৪ মেয়াদের সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে পাঁচজন মন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে জি এম কাদের শুরু থেকে এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক, মসিউর রহমান ও সালমা ইসলাম ২০১৩ সালের শেষ দিকে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হন।

এবারও জাতীয় পার্টির অনেকে সরকারে থাকতে চান। তবে এবার এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন, জাতীয় পার্টি সরকারে যাবে না, তাঁরা সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবে। তিনি নিজে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন বলে স্পিকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন...