ধর্ষণের পর শিশুকে তিনতলা থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ

মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের এক বস্তিতে থাকত শিশু আয়েশা (২)। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যান। এই সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনে গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্যান্য দিনের মতো গত শনিবারও বিকেলে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশের চারতলা একটি ভবনের সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

অভিযোগ ওঠা নাহিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। গেন্ডারিয়া, ঢাকা, ৭ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
অভিযোগ ওঠা নাহিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। গেন্ডারিয়া, ঢাকা, ৭ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, মো. নাহিদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ করেছেন। পরে চারতলা ভবনের তিনতলা থেকে তাকে নিচে ফেলে হত্যা করেছেন।

আয়েশার মামা মো. আলী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, আয়েশাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন ৫৩/১জ দীননাথ সেন রোডের চারতলা বাড়ির মালিক নাহিদ। তিনি ভবনের তিনতলায় থাকেন। আয়েশা বিকেলে যখন খেলছিল, তখন তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ফ্ল্যাট নিয়ে যান নাহিদ। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ফ্ল্যাটের খোলা বারান্দা থেকে আয়েশাকে নিচে ফেলে দেন নাহিদ। এ সময় আয়েশার চিৎকার আশপাশের লোকজনও শোনে।

নাহিদের বিচারের দাবিতে বেলা আড়াইটার দিকে এলাকাবাসী গেন্ডারিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ করে। গেন্ডারিয়া, ঢাকা, ৭ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
নাহিদের বিচারের দাবিতে বেলা আড়াইটার দিকে এলাকাবাসী গেন্ডারিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ করে। গেন্ডারিয়া, ঢাকা, ৭ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

মো. আলীর ভাষ্য, আয়েশাকে নিচে ফেলার শব্দ বাড়ির পাশের মাঠ থেকে কয়েকজন যুবক শুনতে পান। এলাকার লোকজন এসে আয়েশার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে নাহিদকে আটক করেন। আয়েশার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। শরীরেও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন নাহিদ। তবে গতকাল রোববার নাহিদের মেয়ে (১৩) তার বাবার অপকর্মের কথা এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেয়।

শিশু আয়েশা। ছবি: সংগৃহীত
শিশু আয়েশা। ছবি: সংগৃহীত

পরিবার ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঘটনার পর আয়েশাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আয়েশার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর গতকাল জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আয়েশার বাবা মো. ইদ্রিস ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। মা রাজিয়া সুলতানা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁদের চার মেয়ের মধ্যে আয়েশা দ্বিতীয়।

এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযোগ ওঠা নাহিদ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ব্যবসা করতেন। তবে বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন না। দীননাথ সেন রোডে নিজের চারতলা বাড়ির ভাড়ার টাকায় তাঁর সংসার চলে। নাহিদ উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ফের বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদের সংসার ছেড়ে চলে গেছেন।

আয়েশার মৃত্যুর ঘটনায় গেন্ডারিয়া থানা-পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এই মামলায় গতকাল রাতে নাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া নাহিদকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হচ্ছে।

পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার শামসুজ্জামান বাবু প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আয়েশার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নাহিদের পরিবার বা স্বজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি।