সুবর্ণচরে গণধর্ষণ: দুজনের স্বীকারোক্তি, সমাবেশ-বিক্ষোভ

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের এক গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন দুই আসামি। এঁরা হলেন আবুল (৪০) ও ছালা উদ্দিন (৩৫)। সোমবার নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম নবনীতা গুহ তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এদিকে সোমবার নির্যাতনের শিকার নারীকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। এ ছাড়া ঘটনার প্রতিবাদে ভূমিহীন সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নারীকে মারধর ও ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আবুল ও ছালা উদ্দিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠান।

জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাত একটায় ছালা উদ্দিনকে এবং গতকাল রোববার বিকেলে আবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। সোমবার আদালতে হাজির করার পর আদালত তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

রোববার রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া এ মামলার সাত আসামিকে সোমবার কারাগার থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ছাড়া একই মামলায় রোববার গ্রেপ্তার হওয়া অপর আসামি মুরাদকে (৩৫) সোমবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক জাকির হোসেন আদালতে মুরাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। ১০ জানুয়ারি আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

নারীর পাশে বিভাগীয় কমিশনার
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারধর ও ধর্ষণের শিকার নারীকে দেখতে সোমবার সকালে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। এ সময় তিনি নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে সান্ত্বনা দেন এবং তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরীফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম সরদার উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবীদের আসামির পক্ষ না নেওয়ার আহ্বান
সুবর্ণচরে ভোটের দিন রাতে মারধর ও গণধর্ষণের শিকার নারীর পক্ষে দায়ের করা মামলার আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন উন্নয়ন সংগঠন নিজেরা করির সমম্বয়ক খুশী কবির। সোমবার দুপুরে সুবর্ণচরের পাঙ্খারবাজারে আয়োজিত নিরাপত্তার দাবি ও গণধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

খুশী কবির বলেন, ‘সুবর্ণচরের ওই নারীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের যেন আইনের সর্বোচ্চ সাজা হয়, সে দাবি আমরা জানাই। নির্যাতিত নারী যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’

খুশী কবির বলেন, ধর্ষক কোনো দলের নয়। দলীয় প্রভাবে অপরাধীরা যেন ছাড়া না পায়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি ঘটনার ইন্ধনদাতা রুহুল আমিন সম্পর্কে বলেন, ‘রুহুল আমিন গংদের কাউকে যেন এই এলাকায় থাকতে দেওয়া না হয়। সবাই মিলে আপনারা একযোগে এক আওয়াজ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী, যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের সভাপতি শিবলী হোসেন, সুবর্ণচর উপজেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি ছেরাজল হক, পাঙ্খারবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসাইন, চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিল উল্যাহ, ভূমিহীন নেত্রী আমেনা বেগম, আবুল কাশেম, মারজানা বেগম, খোদেজা বেগম প্রমুখ।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
সোমবার দুপুর ১২টায় পাঙ্খারবাজারে নারী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সুবর্ণ ব্লাড ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের সদস্যরা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত লোকজনের শাস্তির দাবি সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার বহন করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী ইউনিয়নের মধ্যম¹সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে যান। এ সময় কয়েকজন যুবক তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। ওই নারী রাজি না হলে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই যুবকেরা। এরপর ওই দিন রাতে ১০-১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর করেন। পরে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়।

এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর চরজব্বর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনো গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছেন মো. হানিফ, মো. চৌধুরী ও মোশারফ। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ।