নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নেতারা। ছবি: প্রথম আলো
রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নেতারা। ছবি: প্রথম আলো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচন কমিশনের কাছে এই দাবিতে স্মারকলিপিও দিয়েছে তারা। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে গেছেন সরকারকে বুঝিয়ে নতুন আরেকটি নির্বাচন দিতে চাপ তৈরি করতে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই দৌড়ঝাঁপের দৃশ্যমান কোনো ‘অগ্রগতি’ চোখে পড়েনি।

ভোটের পর ঐক্যফ্রন্টের সাংসদেরা ছাড়া সবাই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আজ সোমবার নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ শপথও নিয়েছে। বিদেশিরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারকে। এই অবস্থায় ভোট জালিয়াতি, কারচুপিসহ নানা অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া জোটের প্রার্থীদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। জোটের শীর্ষ নেতারা মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে শিগগিরই বৈঠক করবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি বা পদক্ষেপ নেয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের তিন দিন পর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ঢাকায় বিএনপির গুলশান অফিসে ডেকে নির্বাচন নিয়ে তাঁদের বিস্তারিত অভিজ্ঞতা শোনা হয়। সেখানেই প্রার্থীরা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেদিন মামলার কথা জানান।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামে সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শিগগিরই মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হয়। ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচি হিসেবে তাঁরা প্রথমে মামলাগুলো করে নিতে চান। যেহেতু সব আসনের প্রার্থীরাই মামলা করবে এবং সময় খুব বেশি দিন নেই, তাই মামলার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই নেতা জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের বাসায় শীর্ষ নেতাদের একটি বৈঠক হবে। সেখানে মূলত মামলার বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। এখন তাঁরা মামলা নিয়েই এগোতে চান। এ ছাড়া সব আসনের প্রার্থীদের মামলা সহজ হবে বলেও মনে করছেন না নেতারা। আর মামলা করলে সরকার সেটাকে চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত ঝুলাবে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খুব শিগগিরই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মামলা করতে যাচ্ছেন। আগামীকালের বৈঠকে মামলা পরিচালনাসহ পরবর্তী করণীয় বিষয়েও আলোচনা হবে। ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা জানান, মামলা ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে মতামত নেবেন নেতারা।

ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সাত প্রার্থীর শপথ নেওয়া নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের ভিন্ন মন্তব্য সম্প্রতি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জোট থেকে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ড. কামাল হোসেন জয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে ‘বিবেচনাধীন’ এবং গণফোরামের দুই জয়ী প্রার্থীর শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গত ৫ জানুয়ারির এক সংবাদ সম্মেলনে। অবশ্য পরদিনই ঐক্যফ্রন্ট থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, তাঁরা কেউই শপথ নিচ্ছেন না।

ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে যেহেতু শপথ নিতে হয়, তাই এ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আরেকটু ভাবতে চাচ্ছেন। এই নেতারা বলেন, মুখে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কেউ কেউ ‘লাফিয়ে পড়ে’ সংসদে যোগ দিতে চাচ্ছেন। তবে এখনো সংসদে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে জোটে মত-দ্বিমত রয়েছে। আপাতত মামলা নিয়েই এগোতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।