দিনে বিদ্যুৎ থাকে, রাতে নেই

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরে অন্ধকার দূর করতে স্থাপন করা হয়েছিল সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রায় ৬০০ বাড়িতে দেওয়া হয় সংযোগ। শুরুতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় অন্ধকার ঘুচলেও তিন বছর পর সেই অন্ধকারেই ফিরে গেছেন পদ্মার চরের বাসিন্দারা।

প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত এই প্রকল্প থেকে এখন দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পেলেও রাত হলেই বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রাহকেরা। বকেয়া আদায় করতে না পেরে চলে গেছেন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচির (আরইপি) আওতায় ২০১৪ সালে বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে দুই বিঘা জমির ওপর ‘সোলার মিনি গ্রিড’ স্থাপন করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হাইড্রোন বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ইডকল বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হাইড্রোন বাংলাদেশের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করে। ১ দশমিক ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই সোলার মিনি গ্রিড নির্মাণে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চরের দাদপুর, পলাশী ও কালিদাসখালী গ্রামের ৬০০ গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়। গ্রাহকদের অভিযোগ, দেড় বছর পর থেকে তাঁরা আর রাতের বেলায় বিদ্যুৎ পান না। এ জন্য বিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

৯ জানুয়ারি দাদপুর গ্রামে দেখা যায়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কংক্রিটের খুঁটির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিদ্যুতের লাইন টেনে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের মূল দরজা খোলাই ছিল। ভেতরে কাউকে পাওয়া গেল না। স্থানীয় লোকজন জানালেন, এখানে এখনো দুজন নৈশপ্রহরী ও একজন লাইনম্যান কাজ করেন। দাদপুর বাজারে গিয়ে নৈশপ্রহরী লিয়াকত আলীকে পাওয়া গেল। তিনি বললেন, বর্তমানে ৫১৮টি বাড়িতে সংযোগ রয়েছে। সারা দিন বিদ্যুৎ দেওয়া যায় কিন্তু রাতে আর মেশিন টানতে পারে না। ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় মানুষ আর বিল দেয় না। তাঁর মাসিক বেতন সাড়ে ৬ হাজার টাকা। পাঁচ মাস ধরে তিনি আর বেতন পান না।

গ্রামের ইউনুস বিশ্বাস বলেন, তাঁর বাড়িতে টেলিভিশন, তিনটা ফ্যান ও তিনটা বাল্ব রয়েছে। এগুলো দিনের বেলায় চলে। রাতে চলে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হয় না। গ্রামের ইউসুফ মোল্লা বলেন, নদীর ওই পার থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূর থেকে পল্লী বিদ্যুতের লাইন টেনে এই লাইনের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হোক। তাহলে তাদের এই দুর্ভোগ আর থাকবে না।

ইডকল–এর নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচির কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করা হয়। কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, সারা দেশে এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চলে ২৬টি সোলার মিনি গ্রিড নির্মাণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০টি বর্তমানে চালু আছে। চারটি নির্মাণাধীন রয়েছে। শুধু এটি ঠিকমতো চলছে না। তিনি বলেন, যে ২০টি প্রকল্প চালু রয়েছে সেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়। শুধু বাঘায় নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ১০ টাকা ইউনিট দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল। দেড় বছর তারা ভালো সেবা পেয়েছে। কিন্তু লোড বেড়ে যাওয়ায় রাতের বেলায় আর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কথা ছিল গ্রাহকেরা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাল্ব ব্যবহার করবেন। অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও এলইডি হতে হবে। কিন্তু এটা মানা হয়নি।

হাইড্রোন বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী রেনেল সিদ্দিকী বলেন, দেড় বছর এটা ভালো চলেছে। এলাকার গ্রাহকেরা তখন সব সুবিধা পেয়েছেন। ১০ টাকা ইউনিট হিসেবে এই গ্রিড থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পেয়েছে। মাসিক লাইন রেন্ট ছিল ১০০ টাকা। বর্তমানে গ্রাহকেরা বিল দিচ্ছেন না। তাঁর প্রায় ৩০ লাখ বকেয়া পড়েছে। এই বকেয়া টাকা না পেলে তিনি এখন আর এটা সংস্কার করতে পারছেন না। এখন সরকার যদি এটাকে ৫০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন করে প্রিপেইড মিটার করে দেয়, তাহলে তিনি এখানে আবার কাজ শুরু করবেন।