নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশ্ন

>

• দেশে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী
• এবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাত্র ৭ শতাংশ নারী
• ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন
• নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত ৫০ আসন
• রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আইনি বাধ্যবাধকতা
• ৩৩ শতাংশ নারীকে দলে জায়গা দিতে সময় আছে ২ বছর

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ পদে নারীদের রাখার প্রক্রিয়া সফল হলে তা নারীর ক্ষমতায়নে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা রাখত বলে মনে করা হয়। আবার সংরক্ষিত আসনে সুযোগ পাওয়া সাংসদেরা সুযোগের যথাযথ সদ্ব্যবহার করছেন কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন। আর নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসন মিলে মোট আসন ৩৫০। সরাসরি ভোটে রাজনৈতিক দলের পাওয়া আসনের সংখ্যানুপাতে নারী আসন বণ্টিত হয়। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাংসদের ভোটে নারী সাংসদ নির্বাচিত হন।

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ২০০৮ সালে আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে এটা করা হয়। দলগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রায় ১৯ শতাংশ, বিএনপিতে ১৩ শতাংশ এবং সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ পদে নারী আছেন। ৩৩ শতাংশ নারীকে দলে জায়গা দেওয়ার জন্য সময় আছে আর মাত্র দুই বছর।

দেশে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী। কিন্তু এবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাত্র ৭ শতাংশ নারী। যদিও স্বাধীনতার পর এবারই সরাসরি ভোটে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী অংশ নেন এবং জয়ী হন। এবার বিভিন্ন দলের অন্তত ৬৯ জন নারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। জয়ী হন ২২ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিজয়ীদের ১৯ জন আওয়ামী লীগের। সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে একাদশ সংসদে মোট নারী সাংসদ হবেন ৭২ জন।

দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটা সত্য, সরাসরি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিতদের মধ্যে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য কিছু পার্থক্য থেকে যায়। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। যে কারও সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিজয়ী হয়ে আসার মতো অনেক নারী এখন দলে আছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংরক্ষিত আসনেও সরাসরি নির্বাচন করা হলে রাজনীতিতে নারীরা আরও সক্রিয় হতেন। কিন্তু সংরক্ষিত আসনের সাংসদের জন্য নির্ধারিত সংসদীয় এলাকা নেই। ফলে সংসদের বাইরে তাঁদের ভূমিকা রাখা এবং জনসম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তুলনামূলক কমে যায়। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে আগে সংরক্ষিত আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। যেভাবে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে তিনটি ওয়ার্ড মিলিয়ে একটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ভোট হয়, সেভাবে এটা করা যেতে পারে।

নির্বাচিত সাংসদের মতোই সব সুযোগ ও অধিকার পান সংরক্ষিত সাংসদেরা। তাঁরাও সংসদে প্রশ্নোত্তর, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, আইন প্রণয়নসহ সব কাজে অংশ নিতে পারেন। গত সংসদের এক বছরের আইন প্রণয়ন কার্যাবলি বিশ্লেষণ করে সংরক্ষিত আসনের দুজন সদস্যকে আইন প্রণয়নের কাজে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। অবশ্য সরাসরি নির্বাচিত সাংসদদের অনেকেই আইন প্রণয়নের কাজে ততটা আগ্রহী বলা যাবে না। ঘুরেফিরে সাত-আটজনকে এ ক্ষেত্রে সক্রিয় দেখা গেছে।

মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এবারসহ একাধিকবার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন সাগুফতা ইয়াসমিন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংরক্ষিত নারী সাংসদ ছিলেন। সাগুফতা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি পাইপলাইন। মর্যাদার দিক থেকে সব সাংসদই সমান। তবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে তৃপ্তিটা একটু বেশি থাকে।

গত সংসদে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানো হয়। এই মেয়াদ বৃদ্ধির বিলের আলোচনায় সংরক্ষিত আসনের নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী সংসদে বলেছিলেন, নারীরা যোগ্য হলেও দলগুলো অনেক সময় মনোনয়ন দিতে চায় না। সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের উপজেলা-জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে কোথাও কোনো দাম নেই। কোনো কাজ নেই।

সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে বলেন, যখন নারীরা এগোতে চাইছেন, তখন তাঁদের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করা উচিত। গত বছর নারী আসনের মেয়াদ বাড়ানোর পর মহিলা পরিষদ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। মহিলা পরিষদ মনে করে, রাজনৈতিক শক্তির কাছে নারীরা একটি নির্ভরশীল গোষ্ঠী হিসেবে দাঁড়াবে; এটা নারীর জন্য অসম্মানজনক। এই বিধান সরকারের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য, গৃহীত নীতি, জাতিসংঘ ঘোষিত সিডও সনদ ও এসডিজির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।