বিএনপি ভোটে কারচুপির প্রমাণ জোগাড়ে নেমেছে

>

• কয়েক মাস মাঠের কর্মসূচিতে যেতে চান না নীতিনির্ধারকেরা
• নেতা-কর্মীদের মনোবল ফেরাতে দল গোছানোর বিষয়ে গুরুত্ব
• ভোটে কারচুপির প্রমাণ জোগাড় করে বই প্রকাশ করবে বিএনপি
• অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিএনপি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে

এখনই মাঠের কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দলটি এখন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের কাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের কাছে তথ্য চেয়ে আসনভিত্তিক ফরম পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এটা করছে তারা।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১০ বছর ধরে নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলায় আক্রান্ত। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দী। এখন তাঁদের কারামুক্ত করা দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় আগামী কয়েক মাস মাঠের কর্মসূচিতে যেতে চান না নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা নেতা-কর্মীদের মনোবল ফেরাতে দল গোছানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান।

মাঠপর্যায়ে দল গোছানোর অংশ হিসেবে যেসব জেলা ও থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি করা হবে। পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও পুনর্গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, এবার বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি পদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হতে পারে।

তবে এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার কর্মসূচি হচ্ছে, ভোটে কারচুপির দালিলিক প্রমাণ জোগাড় করে তা বই আকারে প্রকাশ করা এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা। মূলত এ লক্ষ্যেই বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি দিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলায় যেতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি আরও কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। মামলায় যাওয়ার আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রার্থীদের কাছ থেকে ভোটে কারচুপির দালিলিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর নির্বাচনী মাঠে তাঁদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখবে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, অনেক আসনে নির্বাচনী প্রচারে সরকারি মহল থেকে হামলা, বাধার ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ প্রার্থীর মধ্যে ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতা ছিল। তাঁরা গা বাঁচিয়ে চলেছেন।

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো মিথ্যার ওপর একটি সরকার প্রতিষ্ঠা হলো। এখান থেকে বিএনপি কীভাবে বেরিয়ে আসবে, জানি না। এই চূড়ান্ত ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কোন কৌশল নিতে হবে, এখন সেটা নির্ধারণ করতে হবে।’

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর গত ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন যে একটি ‘প্রহসন ও তামাশা’ ছিল, তা বিএনপিকে জোর গলায় বলতে হচ্ছে না। বিষয়টি এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তাই নির্বাচনে যত ধরনের কারচুপি হয়েছে, তার তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির না যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে এত দিন যে সমালোচনা ছিল, এই নির্বাচনের পর তা-ও কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর দলের ভেতরে-বাইরে ভোটে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দেবে। কিন্তু নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের অস্বাভাবিক ফলাফলের কারণে সেই আশঙ্কা কেটে গেছে; বরং এই অস্বাভাবিক ফলাফলই বিএনপির জন্য স্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের নামে যেভাবে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাতে দেশ-বিদেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে। এ ঘটনার পুরো তদন্ত হওয়া দরকার। ইতিমধ্যে দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে অনেকে তদন্ত চেয়েছেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্নির্বাচন চাওয়ার ব্যাপারে জোর দেব।’