কেউ দায় নিতে চায় না, তদন্ত শুরু

>

• ১৯ জানুয়ারি ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন হওয়ার কথা ছিল
• অভিযোগ পেয়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো স্থগিত হয়
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটি রোববার কাজ শুরু করেছে
• দুই প্রতিষ্ঠান একে অপরের দিকে ইঙ্গিত করেছে

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের জটিলতা সহজে দূর হচ্ছে না। ক্যাপসুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এদেশি এজেন্ট প্রথম অলোকে বলেছেন, সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারে যথাযথ পরিবেশ না থাকায় ক্যাপসুলের আবরণে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ঔষধ ভান্ডার কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিষয়ে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাত সদস্যের কমিটি গতকাল রোববার কাজ শুরু করেছে। কমিটি জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের বক্তব্য নিয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারও পরিদর্শন করেছে কমিটি।

জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ১৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন হওয়ার কথা ছিল। এই দিন ৬-১১ মাস বয়সী ২৫ লাখ শিশুকে নীল রঙের একটি করে ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ১ কোটি ৯৫ লাখ শিশুকে লাল রঙের একটি করে ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল। ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি মাঠ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো স্থগিত করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নীল রঙের ক্যাপসুল সরবরাহ করেছিল গ্লোব নামের একটি প্রতিষ্ঠান। লাল রঙের ক্যাপসুল সরবরাহ করেছিল ভারতের সফ্টসোল প্রাইভেট লিমিটেড ও তাদের এদেশি এজেন্ট অ্যাজটেক। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান ১৮ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতীয় কোম্পানির ওষুধ কিনতে সরকারকে বাধ্য করা হয়েছিল।

পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ক্যাপসুল তৈরি হয়েছিল ২০১৬ সালে। সরকারের ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা শেষে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারের গুদামে ওষুধ ঢোকানো হয়। এ বছর জুন পর্যন্ত ক্যাপসুলের মেয়াদ ছিল। এর পেছনে ব্যয় হয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

অ্যাজটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম আল ফারুক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি তাঁকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকেনি। একই সময়ে তৈরি ক্যাপসুলের মান ১৮ জানুয়ারি ভারতে পরীক্ষা করা হয়েছে। মান ঠিকই আছে।

জসিম আল ফারুক আরও বলেন, এসব ক্যাপসুল উড়োজাহাজে করে দেশে এসেছে। বিমানবন্দর থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারের গুদামে গেছে। ওই গুদামের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ঠিক মাত্রায় না থাকার কারণে ক্যাপসুলের আবরণে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে তাঁর ধারণা।

অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্যাপসুল মাত্র এক মাস গুদামে ছিল। কিন্তু ক্যাপসুল তৈরি হয়েছিল বেশ আগে। তদন্ত কমিটিকে দেওয়ার জন্য সব ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সত্য বের হবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে।’

সরকার বলেছিল তদন্ত কমিটি সাত কর্মদিবসে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাপসুলের মান পরীক্ষায় প্রয়োজনে নমুনা বিদেশে পাঠানো হবে। এতে কিছু সময় লাগতে পারে।

জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছিলাম কিছু ক্যাপসুল একটির সঙ্গে আর একটি জোড়া লেগে যাচ্ছে। নমুনা সংগ্রহের পর আমরা সত্যতা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, শিশুদের খাওয়ানোর মতো অন্য কোম্পানির ক্যাপসুল মজুত আছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলেই যেকোনো সময় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে।

আরও পড়ুন: