এনআইডির 'ডাউন' সার্ভার 'আপ' হবে কবে?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নির্বাচন কমিশনের ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তথ্য সংরক্ষণকারী সার্ভার বিকল হয়ে আছে ১০ জানুয়ারি থেকে। সেই থেকে জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন সংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ আছে। এই ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই বলা হচ্ছে, দু-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক হয়নি।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলছেন, সার্ভার ডাউন, এটা হতেই পারে। আবার আপ হয়ে যাবে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে আজ বৃহস্পতিবারও বলা হয়েছে, আগামীকাল ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যারা ভুক্তভোগী তাদের সংশয় কাটছেই না।

জাতীয়ভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সার্ভারটি কয়েক দিনের জন্য বন্ধ থাকবে, কিংবা এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে—দেশের জনসাধারণকে এ বিষয়ে অবহিত করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটা জরুরি ছিল। কিন্তু ইসি বা তাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে এ জাতীয় কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। যে কারণে ১০ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশের হাজার হাজার মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত হেলপ লাইনের নম্বর ১০৫। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই নম্বরে ফোন করে যথাযথ সাড়া পাওয়া যায় না।

আজ দুপুরে আগারগাঁওয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সমানে কয়েক শ মানুষকে রাজ্যের বিরক্তি ও হতাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন দিলীপ কুমার, এসেছেন পাশের জেলা মানিকগঞ্জ থেকে। তিনি এনআইডি হারিয়ে ফেলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন এবং নতুন কার্ড তোলার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন।
দিলীপ কুমার বলেন, ‘এনআইডি জরুরিভাবে দরকার। তাই এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার ঢাকায় এলাম। সেবা দেওয়ার কাজ আপাতত বন্ধ আছে জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে অহেতুক হয়রানির শিকার হতাম না।’

জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সার্ভারের অগ্রগতি সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য আমার কাছে নেই। সুতরাং আমি এ বিষয়ে কথা বলব না। সার্ভার যে কোনো সময়ে ডাউন হতেই পারে। আবার আপ হয়ে যাবে।’

ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছেন মৌসুমী আক্তার। তিনি জানান, তাঁর বাবা মারা গেছেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন।এখন সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধা পেতে হলে তথ্য হালনাগাদ করা দরকার।কিন্তু তা করা যাচ্ছে না।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাদের বিদ্যমান সার্ভারটি ২০০৯ সালে ওরাকলের কাছ থেকে কেনা হয়। তাই সার্ভারটি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে ওরাকল। এই সার্ভারের মাধ্যমেই ইসি প্রতিদিন সারা দেশের কমবেশি ৫ হাজার লোককে সেবা দিয়ে থাকে।

আরও জানা যায়, ১০ বছরের পুরোনো এই সার্ভারটি এখন আর আগের মতো কাজ করছে না। তা ছাড়া ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তথ্য সংরক্ষণের পর এই সার্ভারে এখন আর যথেষ্ট পরিমাণে জায়গাও নেই। যন্ত্রটি ১০ জানুয়ারি বিকল হয়ে পড়ে।এরপর যতবার তথ্য আপলোড করার জন্য দেওয়া হয়েছে ততবারই অর্ধেক কাজ করার পর তা ভন্ডুল হয়ে গেছে। যে কারণে নতুন ভোটার হওয়া, ভোটার তথ্য সংশোধন এবং হারানো এনআইডি নতুন করে তোলাসহ নিবন্ধন সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দেওয়ার কাজ বন্ধ আছে। তবে আর্থিক ও টেলিকমসহ অন্যান্য ১০৩টি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়ার কাজ এখনো অব্যাহত আছে।

পুরো বিষয়টি নিয়ে আজ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের রাখঢাক করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সার্ভারটি কেনা হয়েছে। ১০ বছরের পুরোনো। যে কারণে এটি আগের মতো কাজ করছে না। নতুন সার্ভার বসানো জরুরি হয়ে গেছে।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তা আবদুল বাতেন শুরুতে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরে সচিবের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে তিনি বলেন, বয়সের কারণে সার্ভারটি সঠিকভাবে কাজ করছে না। যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করার জন্য ওরাকলের কাছ থেকে ঠিকমতো সেবাও পাওয়া যাচ্ছিল না। যে কারণে নিবন্ধন সংক্রান্ত সেবা বন্ধ আছে।

জনসাধারণের হয়রানি বন্ধে এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি কেন জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বলেন, কখন ঠিক হবে তা নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছিল না। তাই কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তিনি জানান, সার্ভারে জায়গা বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান সার্ভারকে হালনাগাদ এবং নতুন আরও একটি সার্ভার কিনতে হবে। এ জন্য সরকারের কাছে শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।