সেই আবজাল দম্পতির সম্পদ জব্দ

আবজাল হোসেন
আবজাল হোসেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে আদালতের আদেশ পেয়েছে সংস্থাটি। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির স্থাবর অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তাঁকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হলেও দুই মাসের মধ্যেই ঢাকা ফিরে আসেন আবজাল।

আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তাঁরা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ।

আজ মঙ্গলবার আবজালের পাঁচ নিকটাত্মীয়কে দুদকে হাজির থাকতে বলা হলে, তাঁরাও সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। এই পাঁচজনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। এর মধ্যে আবজালের দুই ভাই আছেন। তাঁরা হলেন—ফরিদপুর টিবি হাসপাতালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন ও জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারে হিসাব রক্ষক লিয়াকত হোসেন। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের তিন ভাইকেও তলব করা হয়েছিল। এঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী বুলবুল ইসলাম এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম।