রাখা যায় না, ছাড়াও যায় না

নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে অজ্ঞাত সেই রোগী
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে অজ্ঞাত সেই রোগী
>
  • হাসপাতালের চিকিৎসা শেষ হয়েছে
  • নাম, পরিচয়, ঠিকানার অভাবে তাঁকে বাড়ি পাঠানো যাচ্ছে না
  • জরুরি বিভাগের শয্যায় সাত মাস ধরে আছেন তিনি

রোগীটি ছিলেন হুইলচেয়ারে। নাম জিজ্ঞেস করলে ‘জসিম’ না ‘সজীব’ বললেন বোঝা গেল না। চিকিৎসক ও নার্সরা বললেন, রোগীটি এখন কিছু কথা বলতে পারছেন। গত এক মাসে নিজের নাম সজীবই বলেছেন। এই সজীবকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের চিকিৎসা তাঁর শেষ হয়েছে। নাম, পরিচয়, ঠিকানার অভাবে তাঁকে বাড়ি পাঠানো যাচ্ছে না। সাত মাসে আপনজন কেউ তাঁর খোঁজ নিতে আসেননি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগে এই ‘সজীব’-এর সঙ্গে দেখা হয় ও তাঁর চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এই রোগীর সঙ্গে কথা বলে নাম-পরিচয় সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক মো. বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্নায়ুরোগ চিকিৎসায় দেশে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। জরুরি বিভাগে মাত্র ২৪টি শয্যা। এর একটি শয্যা প্রায় সাত মাস দখল করে আছেন সজীব। তিনি বলেন, ‘উপায়হীন হয়ে তাঁকে রাখতে আমরা বাধ্য হয়েছি। তাঁকে পাঠানোর মতো জায়গা পাচ্ছি না।’

হাসপাতালের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের ২ জুলাই রাত পৌনে দুইটার দিকে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া অবস্থায় সজীবকে (৩০) হাসপাতালে আনা হয়। ওই দিন রাতের পালায় কাজ করেছিলেন এমন দুজন নার্স জানান, চারজন পুলিশ ও করিম নামের এক ব্যক্তি আহত রোগীকে হাসপাতালে এনেছিলেন। রোগী বহনকারীরা বলেছিলেন, সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় রাস্তায় আহত অবস্থায় এক ব্যক্তি পড়ে আছেন তা পুলিশকে জানান করিম। এরপর পুলিশ ও করিম আহত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনেন। কেউই এই আহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় বলতে পারেননি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাঁর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নিউরো-ট্রমা সার্জারি বিভাগের প্রধান ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘প্রথম ২৩ দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাঁকে। অবস্থা ভালো হতে থাকলে এই জরুরি বিভাগেই আনা হয়। এখন জরুরি বিভাগেই আছেন।’

নার্সরা জানিয়েছেন, গত এক মাস রোগী কথা বলছেন। পরিচিত ওয়ার্ডবয়ের নাম ডেকে ভাত খেতে চান। নাম জিজ্ঞাসা করলে ‘সজীব’ বলেছেন। বলেছেন, টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার পাটগাছি গ্রামে বাড়ি। বাবা ও মায়ের নামও বলেছেন। গত এক মাসে এই পরিচয় তিনি একাধিকবার দিয়েছেন।

ধনবাড়ি থানার কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গত বছর জুলাই মাসে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ নিয়ে কেউ তাঁদের কাছে আসেননি। অন্যদিকে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেছেন, আহত বা নিখোঁজের ঘটনা গ্রামে ঘটেনি। সজীব নামের কেউ নিখোঁজ ছিলেন না। সজীবের বলা বাবা ও মায়ের নামেও কেউ ওই গ্রামে নেই।