ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ

পল্টন থানা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম রনি। ছবি: সংগৃহীত
পল্টন থানা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম রনি। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার রাজধানীর পল্টন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ নাজমুল হোসাইন মিরনকে পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যাঁকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধেও দুই বছর আগে পল্টন থানায় মামলা হয়েছিল। ছাত্রলীগের একটি পক্ষ বলছে, পছন্দের ব্যক্তি হওয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পদ দিয়েছে।

২২ জানুয়ারি পুরানা পল্টনের আজাদ সেন্টারের ১৮ তলায় বিশ্বাস ট্রেডার্স ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা শেখ নাজমুল হোসাইন ও তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীদের মারামারি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। পুলিশ তখন দুই পক্ষের ১৬ জনকে আটক করে। পরে শেখ নাজমুলসহ নয় নেতা-কর্মীকে এক দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

এ ঘটনার পর ২৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে শেখ নাজমুল হোসাইনকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সহসভাপতি ‘রনি হাসান’কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পল্টন থানা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, রনির আসল নাম জহিরুল ইসলাম রনি। তাঁর বাবার নাম আবদুল লতিফ মল্লিক। শরীয়তপুরের জাজিরার মল্লিকবাড়ি এলাকায় তাঁর গ্রামের বাড়ি। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ফরিদা বেগম নামে এক নারী জহিরুল ইসলামসহ নয়জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছিলেন। মামলায় জহিরুল ইসলাম ছিলেন ৮ নম্বর আসামি। তিনি ‘হাসান রনি’ নামে পরিচিত।

মামলার এজাহারে ফরিদা বেগম বলেছিলেন, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে নয়াপল্টন এলাকায় বাঁধাইয়ের ব্যবসা করে আসছিলেন। আসামিরা চিহ্নিত চাঁদাবাজ হওয়ায় মাঝেমধ্যেই তাঁর স্বামীর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল। ওই বছরের ২ জুন তারা জোরপূর্বক দেড় লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ জুলাই আসামিরা তাঁর স্বামীর কারখানায় এসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চায়। টাকা না দিলে তাঁর স্বামীকে মারধর করে। এরপর তারা কারখানার ৭-৮ টি মোবাইল, একটি পেপার কাটিং মেশিনসহ আনুমানিক ৫ লাখ টাকা মূল্যের সব মেশিনপত্র এবং আলমারিতে রাখা কর্মচারীদের জমানো ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এরপর তাঁদের বাসায় ঢুকে ছয় হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল নিয়ে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, নয়াপল্টন এলাকায় ব্যবসা করতে হলে আসামিদের চাঁদা দিতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যায় তারা। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে এই এলাকায় তারা ব্যবসা করতে দেবে না।

বুধবার যোগাযোগ করলে ফরিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করার এক মাস পর তাঁরা মামলা তুলে নিয়েছিলেন। কারও চাপে মামলা তুলে নিয়েছিলেন কি না? জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। বলেন, ঝামেলা বেশি দিন পোহাতে চাননি বলে তুলে নিয়েছিলেন। তবে লুট হওয়া বা নিয়ে যাওয়া চাঁদার কোনো অর্থই তারা ফিরে পাননি। পরে তাঁর স্বামীকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হয়।

চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগের বিষয়ে বুধবার জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে কেউ একজন ফোন ধরে তিনি ‘বাথরুমে’ আছেন বলে জানান। পরে ফোন দেওয়া হবে, এমনটা বলে ফোন রাখেন তিনি। তবে এরপর ওই মোবাইল থেকে কোনো ফোন আসেনি। বারবার ফোনে দিলেও কেউ ফোন ধরেনি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, জহিরুল ইসলামকে তাঁদের ‘কেপাবল’ মনে হওয়ায় এক নম্বর সহসভাপতিকে বাদ দিয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল, এমন প্রসঙ্গের অবতারণা করলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। আর মামলা যে কারও বিরুদ্ধে হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল কি না, সেটা দেখার বিষয়। তারপরও এমন অভিযোগের বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।