আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সন্দেহভাজন চার জঙ্গি। ছবি: কমল জোহা খান
র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সন্দেহভাজন চার জঙ্গি। ছবি: কমল জোহা খান

হত্যা–পরিকল্পনা এবং এই লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাঁরা হলেন মো. শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪) ও মো. আবদুল মালেক (৩১)। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে র‍্যাব–১–এর একটি দল। র‍্যাব জানিয়েছে, আটক চারজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য।

র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ব্লগাররা ‘টার্গেট অ্যান্ড কিলিং’–এর শিকার হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশ নিয়ে যুক্ত হয়ে, ওই গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যার চেষ্টা করেছেন। একটি জাতীয় পত্রিকার একটি লেখা পছন্দ না হওয়ায় ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাঁদের আটক করা হয়েছে।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এবিটিকে জেলে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন এর প্রধান জসিমউদ্দীন রহমানী। তবে বাইরে থেকে কে এবিটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে—সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে এবিটির ৯২ জনের একটি সেল গঠন করা হয়েছে। নতুন করে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা পটুয়াখালী জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা খুঁজছে। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছে। দেশ–বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে।

ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি র‍্যাব রাজধানীর আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য মো. আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে (২৮) গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্য এবং মামলার ছায়া তদন্তের ওপর ভিত্তি করে র‍্যাব-১–এর একটি দল গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে এবিটির সক্রিয় এই চার সদস্যকে আটক করে। এঁদের মধ্যে শাহরিয়ার নাফিস ও রবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চর মুখশিয়া গ্রামে। অন্যদের মধ্যে মো. রাসেলের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফুলকাছিয়ায় এবং আবদুল মালেকের বাড়ি ভোলার চর ফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ উপজেলার হাছানগঞ্জ গ্রামে। এঁদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শাহরিয়ার নাফিস সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পরে তিনি আবারও হাইস্কুলে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেন। এই আমানই হলেন শাহরিয়ারের নিয়ন্ত্রক। আমানের নির্দেশনায় তিনি চার–পাঁচটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার–প্রচারণা চালাতেন এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করতেন। এভাবে শাহরিয়ার ৭-৮ জনকে এবিটিতে যুক্ত করান। শাহরিয়ার এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে অ্যাকটিভিস্টদের ওপর নজরদারি করা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অ্যাকিটিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে পড়েন। এরপর সংগঠনের সিদ্ধান্তে অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ওই মিশনে সংগঠন থেকে শাহরিয়ার ও অন্য দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং আরেক সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়া যান। বগুড়ায় যাওয়ার পর তাঁরা অনলাইনে ফোন করে ওই অ্যাকটিভিস্ট সদস্যকে দেখা করতে বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি দেখা না করায় তাঁদের মিশনটি সম্পন্ন হয়নি। পরে তাঁরা বগুড়া থেকে নিজেদের গন্তব্যে চলে যান।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পাস করে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তখন থেকে তিনি ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে আমান রাসেলকে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বর্তমানে তিনি ছদ্মবেশে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। রাসেল তাঁর নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ, তাঁদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিনি ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। এ ছাড়া মো. আবদুল মালেক পেশায় প্রাইভেট গাড়ির চালক। তিনি ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেন।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে জানা যায়, বর্তমানে গোপনে তাঁরা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের অন্যতম পরিকল্পনা হলো, তাঁদের সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তাঁরা তাঁদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারেন, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবেন বলে জানান। জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এরই একাংশ গ্রেপ্তার হওয়া রাসেলের কাছে জমা ছিল।