দুদকের গাফিলতির শিকার জাহালম

বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খেটে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেলেন জাহালম (ডানে)। কাশিমপুর কারাগার থেকে গতকাল রাতে মুক্তির পর তাঁকে জড়িয়ে ধরে ভাইয়ের কান্না।  ছবি: দীপু মালাকার
বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খেটে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেলেন জাহালম (ডানে)। কাশিমপুর কারাগার থেকে গতকাল রাতে মুক্তির পর তাঁকে জড়িয়ে ধরে ভাইয়ের কান্না। ছবি: দীপু মালাকার

মাননীয় আদালতের আদেশে দেশবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। জাহালমের প্রতি ভীষণ অন্যায় করা হয়েছিল। অনেক দেরিতে হলেও আদালতের উদ্যোগে তাঁর একটা প্রতিকার মিলেছে। এই অন্যায়টা যাঁরা আদালতের দৃষ্টিতে এনেছেন, আদালতকে সাহায্য করেছেন, সবাই প্রশংসার দাবিদার।

কিন্তু মনটা সম্পূর্ণ ভরেনি। জাহালমের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া বছরগুলো কেউ তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তবে এ রকম অন্যায়, অবিচার হলে পরে সেটি শোধরানো হয় এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে অন্যায়ের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্র অর্থসাহায্য দিয়ে কিছুটা হলেও তাঁর অপূরণীয় ক্ষতি ঘোচানোর চেষ্টা করে। ভালো হতো কোনো আইনজীবী যদি জাহালমের পক্ষে আপাতত কিছু ক্ষতিপূরণ চাইতেন। আমার বিশ্বাস, আদালত তখন এককালীন ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতেন।

অবিলম্বে কিছু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার জাহালমের নিঃসন্দেহে আছে। আমার ধারণা, এই সপ্তাহেই আদালতে গিয়ে তাঁর জন্য কেউ এককালীন ক্ষতিপূরণের দরখাস্ত করলে সেটা আদালত নিশ্চয়ই বিবেচনায় নেবেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গাফিলতি অনেক। জাহালমের ঘটনায় সেটি খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুদক তার মামলাগুলো যেভাবে তদন্ত ও পরিচালনা করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সংস্থাটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সততা, সক্ষমতাসহ সবকিছু নিয়ে বিশদ পর্যালোচনার সময় এসেছে। দু-চারজন বাদে রাঘববোয়ালদের দোষ প্রমাণ করার বিশেষ কোনো নজির ইদানীংকালে দুদক দেখাতে পারেনি।

শাহদীন মালিক
শাহদীন মালিক

দুদকের বহু মামলা বছরের পর বছর তদন্তাধীন আছে। সবচেয়ে প্রথম মনে পড়ছে বেসিক ব্যাংকের রাঘববোয়ালদের কথা। এত সমালোচনা ও তথ্যপ্রমাণ, তারপরও দুদক এই মামলায় কী করেছে? কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জামিন না পেয়ে জেলে থাকছেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, আর রাঘববোয়ালরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব কিছু খতিয়ে দেখতে হবে।

আমরা আশা করব, জাহালমের ব্যাপারে যে বা যাদের গাফিলতি হয়েছে, দুদক সেটি শুধু তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েই ক্ষান্ত থাকবে না, এত বড় ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। জবাবদিহিহীনতার এই দেশে কেউ কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছুই বোধ হয় রাষ্ট্রীয় সিক্রেট (গোপনীয়তা)। রাষ্ট্র আমাদের, কিন্তু আমাদের কাছ থেকেই রাষ্ট্র সবকিছু গোপন করে। পরিণতিতে জাহালমের মতো অন্যায়, অবিচারের শিকার হয় এ দেশের সাধারণ নাগরিকেরা।

শাহদীন মালিক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

আরও পড়ুন:

মায়ের কোলে জাহালম
১ হাজার ৯২ দিন পর মুক্তি পেলেন জাহালম
‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’