রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের আরও সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ, বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন

এ কে আবদুল মোনেম
এ কে আবদুল মোনেম

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ভারতের কাছে আরও সমর্থন চাইবে। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবদুল মোমেন তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের আগে আজ বুধবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে এ কথা বলেন। আজ রাতে তাঁর প্রথম সফরে ভারতের নয়াদিল্লির উদ্দেশে যাত্রা করার কথা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই। কারণ, এই সমস্যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের জোরদার সমর্থন আশা করেন।

নির্মম সামরিক অভিযানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রতি সম্মান দেখাতে আমি আমার প্রথম বিদেশ যাত্রায় ভারত সফর করছি।’ মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিদেশি নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বপ্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। আমাদের সব সমস্যায় আমরা তাদের পাশে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গেও বিভিন্ন আলোচনার বিষয় রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সমুদ্র এবং স্থল সীমানাসহ এর অনেক ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছি। অন্যান্য বিষয়ও সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে বলেন আশা করি। পারস্পরিক এই সমঝোতার মাধ্যমে আমাদের মাঝে বর্তমানে সবচেয়ে অধিক উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরকালে সম্ভাব্য চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে কিছু জানাননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই সফরে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। সূত্র জানায়, আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) প্রথম সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং ভারতের প্রসার ভারতী দ্বিতীয় এবং দুই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৃতীয় একটি এমওইউ এ স্বাক্ষর করবেন।

শুক্রবার পঞ্চম ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যোগ দিতে ভারত যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জেসিসি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। ভারতীয় পক্ষে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
ঢাকায় কর্মকর্তারা বলেছেন, জেসিসি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থেকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা, যোগাযোগ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি, শিপিং এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ গুরুত্ব পাবে।

জেসিসি বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করবেন এবং শুক্রবার সুষমা স্বরাজের আমন্ত্রণে ভোজসভায় যোগ দেবেন। বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় হাউজিং অ্যান্ড আরবান-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হারদেব সিং পুরির দেওয়া ভোজসভায় যোগ দেবেন।
শুক্রবার মন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের সম্মানে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভোজসভার আয়োজন করবে।
তিন দিনের সফর শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করবেন।

সর্বশেষ জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় ২০১৭ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। এতে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সুষমা স্বরাজ।