জামাই মেলায় মাছ বিক্রির ধুম
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গতকাল বুধবার জামাইবরণ উপলক্ষে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী বকচরের মেলা হয়েছে। প্রতিবছর বাংলা সনের মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বুধবারে বসে এক দিনের এই মেলা। তা চলে আসছে শত বছর ধরে।
এলাকাবাসী মাঠ ইজারা নিয়ে এই মেলার আয়োজন করেন। মেলার দু–তিন দিন আগে থেকেই আশপাশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়স্বজন আসতে থাকেন। এই মেলার প্রধান আকর্ষণ জামাতাদের মাছ ও মিষ্টি কেনা। এ জন্য এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। পরদিন বসে বউমেলা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের রামনগর, ঈশ্বরঘাট, হেউটনগর কোদলাপাড়া নামের চারটি গ্রামের মাঝখানে একটি বিশাল ফসলের মাঠ রয়েছে। এই মাঠের মাঝখানে রয়েছে একটি বড় বিল। একসময় এই বিলে অসংখ্য বক আসত। এ কারণে ওই মাঠের নাম হয় বকচর। অন্তত এক শ বছর ধরে প্রতিবছর এই চার গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বকচরের মেলার আয়োজন করেন। বাড়ি বাড়ি মেয়ে-জামাতারা আসেন। সঙ্গে নাতি-নাতনিরা আসে। এতে গ্রামগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। মেলায় প্রচুর পরিমাণ মাছ ও মিষ্টি ওঠে। আর এলাকার জামাতারা মেলায় গিয়ে বড় বড় মাছ কেনেন। মাটির হাঁড়িতে ভরে মিষ্টি নেন। এসব নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। কোন বাড়ির জামাতা কত বড় এবং বেশি মাছ ও মিষ্টি কিনতে পারেন, এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া এক দিনের এই মেলায় নানা বয়সের সব শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে। পরদিন সকালে বসে বউমেলা। তাঁরা স্বামীদের সঙ্গে মেলায় যান। তাঁদের পছন্দের জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন।
মেলার আয়োজক কমিটির লোকজন বলেন, মেলার প্রায় সপ্তাহ আগেই স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। তাঁদের তালিকার শীর্ষে রাখা হয় নতুন জামাই-বউদের। মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে মাছ ও মিষ্টি। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পাওয়া যায়। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মানুষ এ মেলায় আসে।
এই অঞ্চলের মেয়েরা মেলা উপলক্ষে তাঁদের স্বামী নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। সেই মাছ-মিষ্টি দিয়ে এলাকার প্রায় প্রতি বাড়িতে জামাইদের আপ্যায়ন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মেলামুখী হাজারো মানুষের ঢল। মেলায় যাওয়ার সব কটি পথেই মানুষের ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সারি আরও দীর্ঘ হতে থাকে। মেলার সিংহভাগ জায়গা মাছ ব্যবসায়ীদের দখলে থাকে। এর মধ্যে আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন। পরের স্থানে রয়েছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া রকমারি হোটেল, কাঠ, শিশুতোষ খেলনার পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
মেলায় আসা আমজাদ হোসেন বলেন, বগুড়া শহর থেকে মেলার পাশের গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন। প্রতিবছরই তিনি মেলায় এসে বাহারি মাছ কেনেন। তা ছাড়া মিষ্টি কেনেন। মেলা উপলক্ষে ব্যাপক আনন্দ হয়।
মেলায় মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের মেলায় যমুনা নদী ও চলনবিলের বড় রুই, কাতল, বোয়াল, শোল, আইড়, পাঙাশসহ পুকুরে চাষ করা নানা প্রজাতির মাছের প্রচুর আমদানি ঘটেছে। এবার মেলায় ছয় থেকে আট কেজি ওজনের মাছের চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ আনা হয়েছে।