একবার শুনলেই পড়া মুখস্থ

চয়ন তালুকদার
চয়ন তালুকদার

চয়ন তালুকদার। জন্ম থেকেই দুচোখে আলো নেই। তাই বলে দমে যাওয়ার ছেলে নয় সে। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী চয়ন। চোখে আলো না থাকলেও মনের জোর অসম্ভব রকমের। একবার শুনলেই পড়া মুখস্থ করে ফেলতে পারে। এই বিদ্যাকে পুঁজি করে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পার করেছে সে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

চয়ন জগন্নাথপুর পৌর এলাকার পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের কৃষক নিতাই তালুকদারের ছেলে। উপজেলা সদরের আবদুল খালিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে সে মানবিক বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

গত শনিবার সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় চয়ন তালুকদারের। চয়ন জানায়, তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। এক বোনও তার সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বোন যখন পড়তে বসে, তখন সে মনোযোগ দিয়ে পড়া শুনে মুখস্থ করে নেয়। এভাবে সে এই পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে এসেছে। প্রথম দিনের পরীক্ষা ভালো হয়েছে জানিয়ে পরীক্ষাগুলোর জন্য সবার আশীর্বাদ ও দোয়া কামনা করে চয়ন।

চয়নের এসএসসি পরীক্ষার্থী ওই বোনের নাম মৌসুমী তালুকদার। একই পরীক্ষা কেন্দ্রে সেও এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। তার পরীক্ষাও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

বাবা নিতাই তালুকদার বলেন, ‘জন্মগতভাবেই ছেলে চয়নের দুচোখ অন্ধ। ছেলেকে নিয়ে আমি বড় দুশ্চিন্তায় পড়ি। অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও কোনো সুফল মেলেনি। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে চয়ন পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তার স্মরণশক্তি খুব ভালো। মেয়ে মৌসুমী একটা প্রশ্নের উত্তর বারবার পড়ে মুখস্থ করে। কিন্তু চয়ন একবার শুনলেই তা মুখস্থ করে ফেলে। আমি এখন আশাবাদী, সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে।’

মা মিনতি রানী তালুকদার বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন অন্য ছেলেমেয়েদের চেয়ে চয়নই পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী। পড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তাকে সব প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।’

চয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবদুল খালিক উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনার পাশাপাশি নানা প্রতিভার অধিকারী চয়ন। বিশেষ করে গানবাজনা ও খেলাধুলায় সে পটু। এসব ক্ষেত্রে সে একাধিকবার বিদ্যালয়ে পুরস্কারও পেয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দাশ বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে একজন শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে চয়নকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম শ্রুতি লেখকের দায়িত্ব পালন করছে।’

শ্রুতি লেখক মাজহারুল হক বলে, ‘প্রশ্ন বললেই সঙ্গে সঙ্গে চয়ন তালুকদার আমাকে উত্তর বলে দেন। আমি শুধু তার হয়ে খাতায় উত্তর লিখে দিচ্ছি। এতে কোনো সমস্যা হয়নি।’