রং-বেরঙের বই আর ছড়ায় নজর শিশুদের

বাবার কাঁধে বসে বইমেলায় এসেছে এই খুদে পাঠক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
বাবার কাঁধে বসে বইমেলায় এসেছে এই খুদে পাঠক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

বাংলা একাডেমি যাওয়ার রাস্তাটায় হলুদ শাড়ি পরা মা নাজমুন নাহারের সঙ্গে স্ট্রলারে ছোট্ট ফুটফুটে এক মেয়ে যার পরনেও হলুদ জামা। সঙ্গে ছিল চার বছরের আরেক মেয়ে নায়রা। মা-মেয়ে সবাই হলুদ পরেছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে তাঁরা যাবেন। নায়রা উন্মুখ হয়ে আছে কখন সিসিমপুরের ইকরিরা হাজির হবে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকে শিশু প্রহর। এ সময়টায় মা–বাবার হাত ধরে মেলায় আসে ছোট্ট বইপ্রেমীরা। কেউ কেউ বই পড়তে না জানলেও পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য শিশুদের নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। বইমেলার এক সপ্তাহ পার হলো। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় শিশু প্রহর।

একটি স্টলে সাজানো অনেক বই থেকে নিজের বইটি খুঁজে নিচ্ছে একজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
একটি স্টলে সাজানো অনেক বই থেকে নিজের বইটি খুঁজে নিচ্ছে একজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে সোজা গেলেই শিশু চত্বর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও অভিভাবকদের ভিড় বাড়তে থাকে। একই রঙের পোশাক পরে আসা সেই মা নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মেয়ে নায়রা মেলায় এসেই সিসিমপুরের কার্টুনের চরিত্রগুলোকে খুঁজছে।

শিশু চত্বরে খেলার একটি জায়গা করা হয়েছে। সাড়ে ১১টার পর সেখানে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহযোগিতায় পরিচালিত জনপ্রিয় কার্টুন সিসিমপুরের চরিত্রদের নিয়ে মিলার শিশুদের সঙ্গে মজার সময় কাটান। চোখের সামনে শিকু, ইকরি, হালুম ও টুকটুকিকে পেয়ে শিশুরা বেশ আনন্দিত হয়।

কেনার আগে ভালো করে বইটি দেখে নেওয়া চাই! সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
কেনার আগে ভালো করে বইটি দেখে নেওয়া চাই! সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

শিশু চত্বরেই ভাঙা ভাঙা গলায় একজন আবৃত্তি করছিল, ‘ওই দেখা যায় তালগাছ’ ছড়া। রং-বেরঙের বই ও ছড়ার প্রতি নজর ছিল শিশুদের। শাহিন হোসেন তাঁর দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলে সুহাস হোসেনকে নিয়ে এসেছেন। সুহাস বলে, ভূতের গল্প তার খুব পছন্দ। এবার সে তিনটা ভূতের গল্পের বই কিনেছে।

অভিভাবকদের সঙ্গে ছাড়াও কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও নিয়ে এসেছেন শিক্ষকেরা। বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এসেছে। ওই স্কুলের রিয়াদ আহমেদ বলে, প্রতিবছরই ওদের স্কুল থেকে বইমেলায় নিয়ে আসা হয়। পছন্দমতো বই কেনে ওরা।

একটি স্টলে বই দিয়ে ম্যাজিক দেখানো হচ্ছিল। সেটা দেখে শিশুরা বেশ মজা পাচ্ছিল। নাঈম ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এবার বইমেলায় শিশু চত্বরের পরিসরটা বেশ ভালো হয়েছে। একদম ছোট বাচ্চারা হয়তো বই পড়তে পারে না। কিন্তু এই পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত করানোর জন্যও ওদের আনা উচিত। দেখতে দেখতেই আগ্রহী হবে।’

পছন্দের বইটি হাতে আঁকড়ে ধরে আছে ছোট্ট মুহাইমিনা তানিম। এক স্টল থেকে সে অনেকগুলো বই কিনেছে। কিন্তু ওই বইটি ছাড়া সে বাসায় যাবে না। মা সেলিনা খানম বলেন, ‘একই বই আরও একটা আছে। আরও স্টল ঘুরিয়ে অন্যান্য বই কেনার জন্য বললাম, কিন্তু বায়না ধরে আছে সে এই বই ছাড়া নড়বে না।’